পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় Գo ব্যবধানে কেহ তাহাকে এর চেয়ে কাছে টানিয়া কোনদিন লয় নাই। কারণ, সে ছিল শুধু রাখাল,—তার বেশি নয়। ছেলে-টেলে পড়ায় মেসো-টেসে থাকে। সেটা কোনখানে না জানিলেও তাহার বাসার ঠিকানায় বরানুগমনের আমন্ত্রণ-লিপি ডাক যোগে অনেক আসে। প্রতিভোজের নিমন্ত্রণে নাম তাহার বাদ যায়না । এবং না গেলে সেদিনে না হৌক, দুদিন পরেও একথা তঁহাদের মনে পড়ে। কাজের বাড়ীতে তাঙ্গার অনুপস্থিতি । বস্তুতঃই বড় বিসদৃশ। জীবনে অনেক বিবাহের ঘটকালি সে করিয়াছে, অনেক পাত্র-পাত্রী খুজিয়া বাছিয়া দিয়াছে,- সে পরিশ্রমের সীমা নাই। হর্ষপ্তত পিতা-মাতা সাধুবাদে দুই কান পূর্ণ করিয়া তাহাকে বলিয়াছে, রাখাল বড় ভালো লোক, রাখাল বড় পরোপকারী। কৃতজ্ঞতার পারিতোষিক এমনি করিয়া চিরদিন এইখানেই সমাপ্ত হইয়াছে । এজন্য বিশেষ কোন অভিযোগ যে তাহার ছিল , তাও নয়। শুধু, কখনো হয়ত চাকুরীর নিস্ফল উমেদারীর দিনগুলা মাঝে মাঝে মনে পড়িত। কিন্তু সে এমনিই বা কি ! ভিড়ের মধ্যে চলিতে চলিতে আজ আবার বার বার সেই সকল বহুপরিচিত মেয়েদের কথা মনে পড়িতে লাগিল । তাহদের পোষাকপরিচ্ছদ, হাব-ভাব, আলাপ-আলোচনা, পড়া-শুনা, হাসি-কান্না-এমন কত কি । ব্যক্তি-অব্যক্ত কত না চঞ্চল প্ৰণয়-কাহিনী, মিলন-বিচ্ছেদের কত না অশ্রুসিক্ত বিবরণ । কিন্তু রাখাল ? বেচারা বড় ভালো লোক, বড় পরোপকারী । ছেলে-টেলে পড়ায়,-মেসো-টেসে থাকে। আর আজ ? কি বলিল সারদা ? বলিল, দেবতা, আমার অনেক ভুল হবে, কিন্তু তুমি ফেলে দিলে আমার আর দাড়াবার স্থান নেই।