পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় AV যেন অন্ধকার দেখিতে লাগিল । কিন্তু একটা কান তাহার অনুক্ষণ দরজায় পড়িয়াই থাকে তারকের কড়া-নাড়া ও কণ্ঠস্বরের প্রতীক্ষায়, কিন্তু তাহার দেখা নাই। এদিকে বৃহস্পতির পার হইয়া শুক্রবার আসিয়া পড়িল । দুপুরবেলা পোষ্টাফিসে গেল সে টাকা তুলিতে। কিছু বেশি তুলিতে হইবে । মনে ছিল, যদি তারক বলিয়া বসে তাহার বাহিরে যাইবার মতো জামা কাপড় নাই তা’ হইলে কোনমতে এই বাড়তি টাকাটা তাহার হাতে গুজিয়া দিতে হইবে। এতে মুস্কিল আছে। সে না করে ধার, না চায় দান, না লয় উপহার। একটা আশা, রাখালের পীড়াপীড়িতে সে অবশেষে হার মানে । সময় নষ্ট করা চলিবেন । পোষ্ট-আফিস হইতেই একটা ট্যাক্সি লাইতে হইবে। তারক একটু রাগ করিবে বটে,-তা করুক। কিন্তু টাকা তুলিতে অযথা বিলম্ব ঘটিল। বিরক্ত-মুখে বাহিরে আসিয়া গাড়ী ভাড়া করিতেছে, পাড়ার পিয়ন হাতে একখানা চিঠি দিল,-লেখা তারকের। খুলিয়া দেখিল সে বৰ্দ্ধমানের কোন এক পল্লীগ্রাম হইতে সেই হেড-মাষ্টারির খবর দিয়াছে এবং আসিবার পূর্বে দেখা করিয়া আসিতে পারে নাই বলিয়া দুঃখ জানাইয়াছে। নতুন-মা ও ব্ৰজবাবুকে প্ৰণাম নিবেদন করিয়াছে এবং পত্রের উপসংহারে আশা করিয়াছে অনতিকাল মধ্যেই দিন কয়েকের ছুটি লইয়া না বলিয়া চলিয়া আসার অপরাধের স্বয়ং গিয়া ক্ষমা ভিক্ষা করিবে । ইহাও লিখিয়াছে যে রেণুর বিবাহ বন্ধ হওয়ার সম্বাদ সে জানিয়াই আসিয়াছে। রাখাল চিঠিটা পকেটে রাখিয়া, নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, যাক, ট্যাক্সি ভাড়াটা বঁচিলো । পরদিন বিকালে রাখাল নূতন তেরঙ্গে কাপড়-চোপড় গুছাইয়া তুলিতেছিল, ফিরিতে দিন দশেক দেরি হইবে, নতুন-মা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। রাখাল প্ৰণাম করিয়া চৌকি অগ্রসর করিয়া দিল, তিনি বসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কাল রাত্ৰেই তোমাদের যেতে হবে বুঝি বাবা ?