এইভাবে বসিয়া সে যে কি ভাবিতে লাগিল তাহার স্থিরতা নাই; এই সময়ে চাকরটাকে সম্মুখ দিয়া যাইতে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ওরে, বাবার ঘর থেকে লোকটি চলে গেছে?
বেহারা বলিল, হাঁ।
কখন গেল?
বৃষ্টি পড়বার আগেই।
মনোরমা জানালার পর্দা সরাইয়া দেখিল, কথা ঠিক, পুনরায় বৃষ্টি শুরু হইয়াছে, কিন্তু বেশী নয়। উপরের দিকে চাহিয়া দেখিল পশ্চিম দিগন্তে মেঘ গাঢ়তর হইয়া আসিতেছে, রাত্রে মুষলধারায় বারি-পতনের সূচনা হইয়াছে। কাগজখানা হাতে করিয়া পিতার বসিবার ঘরে আসিয়া দেখিল, তিনি চুপ করিয়া বসিয়া আছেন। বইটা তাঁহার কেদারার হাতলের উপর ধীরে ধীরে রাখিয়া দিয়া কহিল, বাবা, তুমি জান এ-সব আমি ভালবাসিনে।
এই বলিয়া সে পার্শ্বের চৌকিটায় বসিয়া পড়িল।
আশুবাবু মুখ তুলিয়া কহিলেন, কি-সব মা?
মনোরমা বলিল, তুমি ঠিক বুঝতে পেরেছ কি আমি বলচি। গুণীর আদর করতে আমিও কম জানিনে বাবা, কিন্তু তাই বলে শিবনাথবাবুর মত একজন দুর্বৃত্ত দুশ্চরিত্র মাতালকে কি বলে আবার প্রশ্রয় দিচ্ছ?
আশুবাবু লজ্জায় ও সঙ্কোচে একেবারে যেন পাণ্ডুর হইয়া গেলেন। ঘরের এক কোণে একটা টেবিলের উপর বহুসংখ্যক পুস্তক স্তূপাকার করিয়া রাখা ছিল, মনোরমা সময়াভাববশতঃ এখনো তাহাদের যথাস্থানে সাজাইয়া রাখিতে পারে নাই। সেইদিকে চক্ষু নির্দেশ করিয়া শুধু কেবল বলিতে পারিলেন, ওই যে উনি—