অতঃপর, উভয়েই ক্ষণকাল নিঃশব্দে থাকিয়া আশুবাবু বলিতে লাগিলেন, অজিত বিলেত চলে গেলে, বছর-দুই পর্যন্ত তার কোন সংবাদ না পেয়ে আমি ভিতরে ভিতরে পাত্রের সন্ধান যে করিনি তা নয়। কিন্তু মণি হঠাৎ জানতে পেরে আমাকে নিষেধ করে দিয়ে বললে, বাবা এ চেষ্টা তুমি করো না। আমাকে তুমি প্রকাশ্যেই সম্প্রদান করনি, কিন্তু মনে মনে ত করেছিলে। আমি বললাম, এমন কত ক্ষেত্রেই ত হয় মা। কিন্তু, মেয়ের দু’চক্ষে যেন জল ভরে এলো। বললে, হয় না বাবা। শুধু কথাবার্তাই হয়, কিন্তু তার বেশী—না বাবা, আমার অদৃষ্টে ভগবান যা লিখেছেন তাই যেন সইতে পারি, আমাকে আর কোন আদেশ তুমি করো না। দু’জনের চোখ দিয়েই জল পড়তে লাগল, মুছে ফেলে বললাম, অপরাধ করেছি মা, তোর অবুঝ বুড়ো ছেলেকে তুই ক্ষমা কর।
অকস্মাৎ পূর্বস্মৃতির আবেগে তাঁহার কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল। অবিনাশ নিজেও অনেকক্ষণ কথা কহিতে পারিলেন না, তাহার পরে ধীরে ধীরে বলিলেন, আশুবাবু, কত ভুলই না আমরা সংসারে করি এবং কত অন্যায় ধারণাই না জীবনে আমরা পোষণ করি।
আশুবাবু ঠিক বুঝিতে পারিলেন না, কহিলেন, কিসের?
এই যেমন আমরা অনেকেই মনে করি, মেয়েরা উচ্চ-শিক্ষিত হয়ে মেমসাহেব বনে যায়, হিন্দুর প্রাচীন মধুর সংস্কার আর তাদের হৃদয়ে স্থান পায় না। কত বড় ভ্রম বলুন ত?
আশুবাবু ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন, ভ্রম অনেক স্থলেই হয় বটে। কিন্তু কি জানেন অবিনাশবাবু, শিক্ষাই বা কি, আর অশিক্ষাই বা কি, আসল বস্তু পাওয়া। এই পাওয়া-না-পাওয়ার উপরেই সমস্ত নির্ভর