আশ্চর্যই বটে। এ ছাড়া মনের কথা ব্যক্ত করিবার আর শব্দ ছিল কি? বস্তুতঃ, উহারা চলিয়া গেল যেন এক অত্যাশ্চর্য নাটকের মধ্য-অঙ্কেই যবনিকা টানিয়া দিয়া—পর্দার ও-পিঠে না-জানি কত বিস্ময়ের ব্যাপারই অগোচরে রহিল! সকলের মনের মধ্যে এই একটা কথাই তোলাপাড়া করিতে লাগিল, এবং সকলেরই মনে হইল, যেন এইজন্যেই এখানে শুধু তাহারা আসিয়াছিল। আকাশ চাঁদ উঠিয়াছে, হেমন্তের শিশির-সিক্ত মন্দ-জ্যোৎস্নায় অদূরে তাজের শ্বেতমর্মর মায়াপুরীর ন্যায় উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে, কিন্তু তাহার প্রতি আর কাহারও চোখ নাই।
মনোরমা বলিল, এবার না উঠলে তোমার সত্যিই অসুখ করবে বাবা।
অবিনাশ কহিলেন, হিম পড়চে, উঠুন।
সকলেই উঠিয়া দাঁড়াইলেন। ফটকের বাহিরে আশুবাবুর প্রকাণ্ড মোটর গাড়ি দাঁড়াইয়া, কিন্তু অক্ষয়-হরেন্দ্রর টাঙ্গা-ওয়ালার খোঁজ পাওয়া গেল না। সে বোধ হয় ইতিমধ্যে বেশী ভাড়ার সওয়ারি পাইয়া অদৃশ্য হইয়াছিল। অতএব কোনমতে ঠেসাঠেসি করিয়া সকলকে মোটরেই উঠিতে হইল।
কিছুক্ষণ পর্যন্ত সকলেই চুপ করিয়া ছিলেন, কথা কহিলেন প্রথমে অবিনাশ; কহিলেন, শিবনাথ মিছে কথা বলেছিল। কমল কিছুতেই একজন সামান্য দাসীর মেয়ে হতে পারে না। অসম্ভব! এই বলিয়া তিনি মনোরমার মুখের দিকে চাহিলেন।