পাতা:শোধবোধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম অঙ্ক
শোধ-বােধ
তৃতীয় দৃশ্য

 সতীশ। তুমি আমাকে অযোগ্য বলে’ জানো, এতে আমি খুসি হবো?

 নলিনী। এই টেনিস কোর্টের অযোগ্যতাকে তুমি অযোগ্যতা বলে’ লজ্জা পাও? এতেই আমি সব চেয়ে লজ্জা বোধ করি। তুমি তো তুমি, এখানে স্বয়ং বুদ্ধদেব এসে যদি দাঁড়াতেন, আমি দুই হাত জোড় করে’ পায়ের ধূলো নিয়েই তাঁকে ব’ল্‌তুম, ভগবান্, লাহিড়িদের বাড়ির এই টেনিস্ কোর্টে আপনাকে মানায় না, মিষ্টার নন্দীকে তার চেয়ে বেশী মানায়। শুনে কি তখনই তিনি হার্ম্মানের বাড়ি ছুট্‌তেন টেনিস সুট্ অর্ডার দিতে?

 সতীশ। বুদ্ধদেবের সঙ্গে—

 নলিনী। তোমার তুলনাই হয় না, তা জানি। আমি ব’লতে চাই, টেনিস্ কোর্টের বাইরেও একটা মস্ত জগৎ আছে—সেখানে চাঁদনীর কাপড় পরেও মনুষ্যত্ব ঢাকা পড়ে না। এই কাপড় পরে’ যদি এখনি ইন্দ্রলোকে যাও তো উর্ব্বশী হয় তো একটা পারিজাতের কুঁড়ি ওর ‘বাটন হোল’এ পরিয়ে দিতে কুণ্ঠিত হবে না—অবিশ্যি তোমাকে যদি তার পছন্দ হয়।

 সতীশ। বাটন্ হোল তো এই র’য়েচে, গোলাপের কুঁড়িও তোমার খোঁপায়—এবারে পছন্দর পরিচয়টা কি ভিক্ষে করে’ নিতে পারি?

 নলিনী। আবার ভুলে যাচ্চ, এটা স্বর্গ নয়, এটা টেনিস্ কোর্ট।

 সতীশ। এটা যে স্বর্গ নয়, সেইটে ভুল তে পারিনে ব’লেই তো—

 নলিনী। এইবার তো নন্দীর সুর লাগ্‌চে গলায়—

 সতীশ। তার একটিমাত্র কারণ—আমি টেনিস্ কোর্টে‌রই যোগ্য হ’তে চাই। উর্ব্বশীর হাতের পারিজাতের কুঁড়ির পরে আমার একটুও লোভ নেই।

৪৬]