শ্ৰীকান্ত ২৭ সে সব ঠিক চুরি নয়—এমনিই একটা অদ্ভুত ধারণা প্রায় সকল ছেলেরই থাকে। আমারও তাই ছিল। ন হইলে, এই 'টুং' ' শব্দটি কানে যাইবামাত্রই এতক্ষণের এত বীরত্ব, এত পৌরুষ, সমস্তই এক মূহুর্তে এমন শুষ্কতৃণের মত ঝরিয়া পড়িত না । সে যদি মাছগুল গঙ্গার জলে ফেলিয়া দিত, কিংবা—আর যাহাই করুক, শুধু টাকা-কড়ির সহিত ইহার সংশ্রব ন ঘটাইত, তাহ। হইলে আমাদের এই মৎস্য-সংগ্রহের অভিযানটিকে কেহ চুরি বলিলে ক্রোধে বোধ করি তাহার মাথাটাই ফাটাইয় দিতাম এবং সে তাহার ন্যায্য প্রাপ্য পাইয়াছে বলিয়াই মনে করি তাম । কিন্তু ছিঃ ছিঃ ! এ কি ! একাজ ত জেলখানার কয়েদীর করে ! ইন্দ্র কথা কহিল, জিজ্ঞাস করিল, তুই একটুও ভয় পাসনি, না রে শ্রীকান্ত ? আমি সংক্ষেপে জবাব দিলাম, না । জিজ্ঞাস করলাম, আচ্ছা ইন্দ্র, তুমি এখানে একলা আসতে পারে ? ইন্দ্ৰ হাসিল । কহিল, আমি ত একলাই আসি । ভয় করে না ? না। রামনাম করি। কিছুতেই তার আসতে পারে না । একটু থামিয় কহিল, রামনাম কি সোজ। রে ? তুই যদি নাম করতে করতে সাপের মুখ দিয়ে চলে যাস, তবু তোর কিছু হবে না। সব দেখবি ভয়ে ভয়ে পথ ছেড়ে দিয়ে পালাবে । কিন্তু ভয় করলে হবে না। তা হ’লেই তার টের পাবে, এ শুধু চালাকি করচে—তারা সব অন্তর্যামী কি না। বালুর চর শেষ হইয়া আবার কঁাকরের পাড় শুরু হইল।
পাতা:শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব-কিশোর সংস্করণ.djvu/৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।