$8 শ্ৰীকান্ত সেইখানেই আমি ধপ, করিয়া বসিয়া পড়িয়া ভাজ খুলিয়। কাগজখানি চোখের সামনে মেলিয়া ধরিলাম। চিঠিতে লেখা ছিল, শ্রীকান্ত, যাইবার সময় আমি তোমাদের আশীর্ণবাদ করিতেছি । শুধু আজ নয়, যতদিন বাচিব, ততদিন তোমাদের আশীৰ্ব্ববাদ করিব । কিন্তু আমার জন্য তোমরা দুঃখ করিও না । ইন্দ্রনাথ আমাকে খুজিয় বেড়াইবে, সে জানি ; কিন্তু তুমি তাহাকে বুঝাইয়া-মুঝাইয়া নিরস্ত করিয়ো । কেন জানিন আমার এই অন্তবিহীন দুঃখের কথাগুলো তোমাদের না জানাইয়া কোন মতেই বিদায় লইতে পারিতেছি না। শ্রীকান্ত, তোমার এই দুঃখিনী দিদির নাম অন্নদ। স্বামীর নাম কেন গোপন করিয়! গেলাম, তাহার কারণ—এই লেখাটুকু শেষ পর্য্যন্ত পড়িলেই বুঝিতে পরিবে । আমার বাবা বড়লোক । তার ছেলে ছিল না । আমরা দুটি বোন। সেইজন্য বাবা দরিদ্রের গুহ হইতে স্বামীকে আনাইয়া নিজের কাছে রাখিয়া লেখাপড়া শিখাইয়া মানুষ করিতে চাহিয়াছিলেন । তাহাকে লেখাপড়া শিখাইতে পারিয়াছিলেন– কিন্তু মানুষ করিতে পারেন নাই । আমার বড় বোন বিধবা হইয়া বাড়ীতেই ছিলেন—ইহাকেই হত্যা করিয়া স্বামী নিরুদেশ হন । এ দুষ্কৰ্ম্ম কেন করিয়াছিলেন, তাহার হেতু তুমি ছেলে মানুষ আজ না বুঝিতে পারলেও একদিন বুঝিবে। তার পরে সাত বৎসর পরে আবার দেখা পাই । যেমন বেশে তোমরা তাকে দেখিয়াছিলে, তেমনি বেশে আমাদেরই বাটীর সম্মুখে তিনি সাপ খেলাইতে ছিলেন । র্তাকে আর কেহ চিনিতে পারে নাই, কিন্তু আমি পারিয়াছিলাম। আমার চক্ষুকে তিনি ফাকি দিতে পারেন নাই ।
পাতা:শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব-কিশোর সংস্করণ.djvu/৭০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।