পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২১
শ্রীকান্ত

 বাইজী কহিল, তুমি কি ভাবছ, বলব?

 কি ভাবচি?

 তুমি ভাবচ, আহা! ছেলে-বেলায় একে কত কষ্টই দিয়েচি! কাঁটার বনে পাঠিয়ে রোজ-রোজ বঁইচি তুলিয়েচি, আর তার বদলে শুধু মার-ধোর করেছি। মার খেয়ে চুপ ক’রে কেবল কেঁদেছে, কিন্তু কখনো কিছু চায় নি। আজ যদি একটা কথা বল্‌চে ত শুনিই না। না হয় নাই গেলাম শ্মশানে। এই না?

 আমি হাসিয়া ফেলিলাম।

 পিয়ারীও হাসিয়া কহিল, হবেই ত। ছেলে-বেলায় একবার যাকে ভালবাসা যায়, তাকে কি কখনো ভোলা যায়? সে একটা অনুরোধ কর্‌লে কেউ কখনো কি পায়ে ঠেলে যেতে পারে? এমন নিষ্ঠুর সংসারে আর কে আছে। চল, একটু বসিগে, অনেক কথা আছে। রতন, বাবুর বুটটা খুলে দিয়ে যা রে। হাস্‌চ যে?

 হাসচি, কি ক’রে তোমরা মানুষ ভুলিয়ে বশ করো, তাই দেখে।

 পিয়ারীও হাসিল, কহিল, তাই বই কি। পরকে কথায় ভুলিয়ে বশ করা যায়, কিন্তু জ্ঞান হওয়া পর্য্যন্ত নিজেই যার বশ হয়ে আছি, তাকেও কি কথায় ভুলানো যায়? আচ্ছা, আজই না হয় কথা কইচি; কিন্তু প্রত্যহ কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যখন বঁইচির মালা গেঁথে দিতুম, তখন কটা কথা কয়েছিলুম শুনি? সে কি তোমার মারের ভয়ে না কি? মনেও ক’রো না। সে মেয়ে রাজলক্ষ্মী নয়। কিন্তু ছিঃ! আমাকে তুমি একেবারেই ভুলে গিয়েছিলে—দেখে চিন্‌তেও পারোনি! বলিয়া হাসিয়া মাথা নাড়িতেই তাহার দুই কানের হীরাগুলা পর্য্যন্ত দুলিয়া হাসিয়া উঠিল।

 আমি বলিলাম, তোমাকে মনেই বা কবে করেছিলাম যে, ভুলে