পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৩
শ্রীকান্ত

 সে যা হয় একটা হবে।

 তা হবে, বলিয়া পিয়ারী একটুখানি হাসিল। তার পর সুমুখে উঠিয়া আসিয়া খাটের একটা বাজুর উপর বসিয়া, আমার মুখের দিকে ক্ষণকাল চুপ করিয়া চাহিয়া থাকিয়া, আবার একটু হাসিয়া কহিল, তিন-চারদিনে না হোক্ দশ-বারোদিনে এ রোগ সার্‌বে তা জানি, কিন্তু আসল রোগটা কতদিনে সারবে, আমাকে বল্‌তে পারো?

 আসল রোগ আবার কি?

 পিয়ারী কহিল, ভাব্‌বে একরকম, বল্‌বে একরকম, কর্‌বে আর একরকম—চিরকাল ঐ এক রোগ। তুমি জানো যে একমাসের আগে তোমাকে চোখের আড়াল কর্‌তে পার্‌ব না—তবু বল্‌বে—তোমাকে কষ্ট দিলুম, তুমি যাও। ওগো দয়াময়! আমার উপর যদি তোমার এতই দরদ্—তবে যাই হোক্ গে—সন্ন্যাসী নও, সন্ন্যাসী সেজে কি হাঙ্গামাই বাধালে! এসে দেখি, মাটির ওপর ছেঁড়া কাঁথায় প’ড়ে অঘোর অচৈতন্য! মাথাটা ধূলো-কাদায় জট পাকিয়েছে; সর্ব্বাঙ্গে রুদ্রাক্ষি বাঁধা; হাতে দুগাছা পেতলের বালা। মা গো মা! দেখে কেঁদে বাঁচিনে! বলিতে বলিতেই উদ্বেল অশ্রুজল তাহার দুই চোখ ভরিয়া টল টল করিয়া উঠিল। হাত দিয়া তাড়াতাড়ি মুছিয়া ফেলিয়া কহিল, বঙ্কু বলে, ইনি কে মা? মনে মনে বল্‌লুম, তুই ছেলে, তোর কাছে সে কথা আর কি বল্‌ব বাবা! উঃ, কি বিপদের দিনই সে দিনটা গেছে। মাইরি, কি শুভক্ষণেই পাঠশালে দুজনের চার চক্ষু দেখা হয়েছিল! যে দুঃখটা তুমি আমাকে দিলে, এত দুঃখ ভূ-ভারতে কেউ কখনো কাউকে দেয় নি—দেবে না! সহরের মধ্যে বসন্ত দেখা দিয়েছে—সবাইকে নিয়ে ভালোয় ভালোয় পালাতে পার্‌লে যে বাঁচি! বলিয়া সে একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিল।

 সেই রাত্রেই আমরা আরা ত্যাগ করিলাম। একজন ছোক্‌রা ডাক্তার-