পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীকান্ত
১৭৪

বাবু অনেক প্রকার ঔষধের সরঞ্জাম লইয়া আমাদের পাটনা পর্য্যন্ত পৌঁছাইয়া দিতে সঙ্গে গেলেন।

 পাটনায় পৌঁছিয়া বার-তেরোদিনের মধ্যেই একপ্রকার সারিয়া উঠিলাম। একদিন সকালে পিয়ারীর বাড়ী একলা, ঘরে ঘরে ঘুরিয়া আসবাব-পত্র দেখিয়া কিছু বিস্মিত হইলাম। এমন যে ইতিপূর্ব্বে দেখি নাই, তাহা নয়। জিনিষগুলি ভালো এবং বেশি মূল্যের, তা বটে; কিন্তু এই মারোয়াড়ী-পাড়ার মধ্যে এই সকল ধনী ও অল্পশিক্ষিত সৌখীন মানুষের সংস্রবে এত সামান্য জিনিসপত্রেই এ সন্তুষ্ট রহিল কি করিয়া? ইতিপূর্ব্বে আমি আরও যতগুলি এই ধরনের ঘর-দ্বার দেখিয়াছি, তাহাদের সহিত কোথাও কোন অংশে ইহার সাদৃশ্য নাই। সেখানে ঢুকিলেই মনে হইয়াছে, ইহার মধ্যে মানুষ ক্ষণকালও অবস্থান করে কি করিয়া? ইহার ঝাড়, লণ্ঠন, ছবি, দেয়ালগিরি, আয়না, গ্ল্যাসকেসের মধ্যে আনন্দের পরিবর্ত্তে আশঙ্কা হয়—সহজ শ্বাস-প্রশ্বাসের অবকাশটুকুও বুঝি মিলিবে না। বহুলোকের বহুবিধ কামনা-সাধনার উপহাররাশি এম্‌নি ঠাসাঠাসি গাদাগাদি ভাবে চোখে পড়ে যে, দৃষ্টিমাত্রেই মনে হয়, এই অচেতন জিনিসগুলার মত তাহাদের সচেতন দাতারাও যেন এই বাড়ীর মধ্যে একটুখানি যায়গার জন্য এমনি ভিড় করিয়া পরস্পরের সহিত রেষারেষি ঠেলাঠেলি করিতেছে! কিন্তু এ বাড়ীর কোন ঘরে আবশ্যকীয় দ্রব্যের অতিরিক্ত একটা বস্তুও চোখে পড়িল না; এবং যাহা চোখে পড়িল, সেগুলি যে গৃহস্বামিনীর আপনার প্রয়োজনেই আহৃত হইয়াছে, এবং তাহার নিজের ইচ্ছা এবং অভিরুচিকে অতিক্রম করিয়া আর কাহারও প্রলুব্ধ অভিলাষ যে অনধিকার প্রবেশ করিয়া যায়গা জুড়িয়া বসিয়া নাই, তাহা অতি সহজেই বুঝা গেল। আরও একটা ব্যাপার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। একটা নামজাদা বাইজীর গৃহে গান বাজনার কোন