পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীকান্ত
২৪

ফেলিয়া প্রাণপণে টান দিলাম। ইন্দ্র খুসি হইয়া বলিল, এই ত চাই। কিন্তু আস্তে ভাই—ব্যাটারা ভারী পাজী। আমি ঝাউবনের পাশ দিয়ে মক্কাক্ষেতের ভিতর দিয়ে, এমনি বার করে নিয়ে যাব যে শালারা টেরও পাবে না। একটু হাসিয়া কহিল, আর টের পেলেই বা কি? ধরা কি মুখের কথা! দ্যাখ শ্রীকান্ত, কিচ্ছু ভয় নেই—ব্যাটাদের চারখানা ডিঙি আছে বটে, কিন্তু যদি দেখিস ঘিরে ফেল্‌লে বলে—আর পালাবার যো নেই, তখন ঝুপ ক’রে লাফিয়ে পড়ে এক ডুবে যতদূর পারিস গিয়ে ভেসে উঠলেই হ’ল। এ অন্ধকারে আর দেখবার জোটি নাই—তারপর মজা ক’রে সতুয়ার চড়ায় উঠে ভোর-বেলায় সাঁত্‌রে এপারে এসে গঙ্গার ধারে ধারে বাড়ী ফিরে গেলেই বাস্‌! কি ক’র্‌বে ব্যাটারা?

 চড়াটার নাম শুনিয়াছিলাম; কহিলাম, সতুয়ার চড়া ত ঘোরনালার সুমুখে, সে ত অনেক দূর!

 ইন্দ্র তাচ্ছিল্যভরে কহিল, কোথায় অনেক দূর? ছ সাত কোশও হবে না বোধ হয়। হাত ভেরে গেলে চিত হ’য়ে থাক্‌লেই হ’ল—তা ছাড়া মড়া-পোড়ানো বড় বড় গুঁড়ি কত ভেসে যাবে দেখ্‌তে পাবি।

 আত্মরক্ষার যে সোজা রাস্তা সে দেখাইয়া দিল, তাহাতে প্রতিবাদের আর কিছু রহিল না। এই দিক্‌-চিহ্নহীন অন্ধকার নিশীথে আবর্ত্তসঙ্কুল গভীর তীব্র জলপ্রবাহে সাতক্রোশ ভাসিয়া গিয়া ভোরের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া থাকা। ইহার মধ্যে আর এ-দিকের তীরে উঠিবার জো নাই। দশ-পোনর হাত খাড়া উঁচু বালির পাড় মাথায় ভাঙ্গিয়া পড়িবে—এই দিকেই গঙ্গার ভীষণ ভাঙন ধরিয়া জলস্রোত অর্দ্ধবৃত্তাকারে ছুটিয়া চলিয়াছে!

 বস্তুটা অস্পষ্ট উপলব্ধি করিয়াই আমার বীর-হৃদয় সঙ্কুচিত হইয়া বিন্দুবৎ হইয়া গিয়াছিল। কিছুক্ষণ দাঁড় টানিয়া বলিলাম, কিন্তু আমাদের ডিঙ্গির কি হবে?