পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ArrV ܕ ܢ রহিয়াছে। কিন্তু তাই বলিয়া প্ৰেতিযোনি স্বীকার করাও এ স্বীকারোক্তির প্রচ্ছন্ন তাৎপৰ্য নয়। কারণ, নিজের চোখেই ত দেখিয়াছি-আমাদের গ্রামেই একটা বৃদ্ধ পাগল ছিল, সে দিনের বেলা বাড়ী বাড়ী ভাত চাহিয়া খাইত, আর রাত্ৰিতে একটা ছোট মইয়ের উপর কেঁচার কাপড়টা তুলিয়া দিয়া, সেটা সুমুখে উচু করিয়া ধরিয়া পথের ধারের বাগানের মধ্যে গাছের ছায়ায় ঘুবিয়া বেড়াইত। সে চেহারা দেখিয়া অন্ধকারে কত লোকের যে দাঁতকপাটি লাগিয়াছে, তাহার অবধি নাই। কোন স্বাৰ্থ নাই, অথচ এই ছিল তাহার অন্ধকার রাত্রির কাণ্ড । নিরর্থক মানুষকে ভয় দেখাইবার আরও কত প্ৰকাবের অদ্ভূত ফন্দি যে তাহার ছিল, তাহার সীমা নাই। শুকনো কাঠের অ্যাটি গাছের ডালে বাধিয়া তাহাতে আগুন দিতে ; মুখে কালিবুলি মাখিয়া বিশালাক্ষী দেবীর মন্দিরে বহু-ক্লেশে খড়া বাহিয়া উঠিয়া বসিয়া থাকিত ; গভীর রাত্ৰিতে ঘরের কানাচে বসিয়া খোনা-গলায় চাষীদের নাম ধরিয়া ডাকিত । অথচ, কেহ কোন দিন তাহাকে ধরিতে পারে নাই, এবং দিনের বেলায় তাহার চাল-চলন স্বভাব-চরিত্র দেখিয়া ঘুর্ণাগ্রেও তাঁহাকে সংশয় করিবার কথা কাহারও মনে উদয় হয় নাই। আর এ শুধু আমাদের গ্রামেই নয়,-আট-দশখানা গ্রামের মধ্যেই সে এই কর্ম করিয়া বেড়াইত। মরিবার সময় নিজের বজাতি সে নিজে স্বীকার করিয়া যায় এবং ভূতের দৌরাত্ম্যও তখন হইতে শেষ হয়। এ ক্ষেত্রেও হয়ত তেমনি কিছু ছিল,-হয়ত ছিল না। কিন্তু যাক গে। বলিতেছিলাম যে, সেই ধূলাবালি-ভরা বাঁধের উপর যখন হতজ্ঞানের মত বসিয়া পড়িলাম, তখন শুধু দু'টি লঘুপদধ্বনি শ্মশানের অভ্যন্তরে গিয়া ধীরে ধীরে মিলাইল । মনে হইল, সে যেন স্পষ্ট করিয়া জানাইলছি ছি, ও তুই কি করিলি ? তোকে এতটা পথ যে পথ দেখাইয়া আনিলাম, সে কি ওইখানে বসিয়া পড়িবার জন্য ? আয় আয় । একেবারে আমাদের ভিতরে চলিয়া আয়। এমন অশুচি অস্পৃশ্যের মত প্ৰাঙ্গণের একান্তে বসিস না,-আমাদের সকলের মাঝখানে আসিয়া বোস। কথাগুলা কাণে শুনিয়াছিলাম, কিংবা হৃদয় হইতে অনুভব করিয়াছিলাম-এ কথা আরজ আর স্মরণ করিতে পারি না । কিন্তু, তবুও যে চেতনা রহিল, তাহার