পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত SR হাতে পাতিয়া রাখিয়া গেছে, এ যেন নিজের অন্তরের ভিতর হইতে অনুভব । করিলাম । আজ ওই লোকটার সম্মুখে আমার অচিন্ত্যপূর্ব অভ্যাগমে রাজলক্ষ্মী হতবুদ্ধি হইয়া প্ৰথমে যে ব্যবহারই করুক, আমার নির্বিকার ঔদাসীন্যে মনে মনে সে যে কতখানি শঙ্কিত হইয়া উঠিতেছিল, তাহা আমার অগোচর ছিল না, এবং কেন যে আমার মধ্যে একটা ঈর্ষার প্রকাশ দেখিবার জন্য সে এতক্ষণ ধরিয়া এত প্রকারে আমাকে আঘাত করিয়া ফিরিতেছিল, তাহাও আমি বুঝিয়াছিলাম। কিন্তু সমস্ত জানিয়াও যে নিজের নিষ্ঠব রূঢ়তাকেই পৌরুষ জ্ঞান করিয়া তাহার অভিমানের কোন মান্য রাখি নাই, তাহার প্রত্যেক ক্ষুদ্র আঘাতটিকেই শতগুণ করিয়া ফিরাইয়া দিয়াছি, এই অন্যায় আমার মনের মধ্যে এখন ছুচের মত বিধিতে লাগিল। বিছানায় শুইয়া পড়িলাম, কিন্তু ঘুমাইতে পারিলাম না। নিশ্চয় জানিতাম একবার সে আসিবেই। এখন সেই সময়টুকুর জন্যই উদ্‌গ্ৰীব হইয়া রহিলাম । শ্ৰান্তিবশতঃ হয়ত একটুখানি ঘুমাইয়াও পড়িয়াছিলাম। সহসা চোখ মেলিয়া দেখিলাম, পিয়ারী আমার গায়ের উপর একটা হাত রাখিয়া বসিয়াছে। উঠিয়া বসিতেই সে কহিল, বৰ্মায় গেলে মানুষ আর ফেরে না। -সে খবর জানো ? না, তা জানি নে । তবে ? ফিরতেই হবে, এমন ত কারো মাথার দিব্যি নেই। নেই ? তুমি কি পৃথিবীর সকলের মনের কথাই জানো নাকি ? কথাটা অতি সামান্য । কিন্তু সংসারে এই একটা ভারি 'আশ্চৰ্য যে মানুষের দুর্বলতা কখন কোন ফঁাক দিয়া যে আত্মপ্ৰকাশ করিয়া বসে, তাহা কিছুতেই অনুমান করা যায় না। ইতিপূর্বে কত অসংখ্য গুরুতর কারণ ঘটিয়া গিয়াছে, আমি কোনদিন আপনাকে ধরা দিই নাই ; কিন্তু আজি তাহার মুখের এই অত্যন্ত সোজা কথাটা সন্থ করিতে পারিলাম না। মুখ দিয়া সহসা বাহির হইয়া গেলা-সকলের মনের কথা তা জানি নে রাজলক্ষ্মী,