পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

डेकोस्छ RR চাহিয়া থাকিতে হয়। কিন্তু অবস্থা হিসাবে রেঙ্গুনযাত্রীদের সহিষ্ঠা তাহাদের যে এত বড় মিল ছিল, এ কথা তখন কে ভাবিয়াছিল। ক্রমশঃ “পিলেগক ডগ দরি’ আসন্ন হইয়া উঠিল-সাহেব ডাক্তার স-পেয়াদা দেখা দিলেন। সেই লাইনবৰ্তী অবস্থায় বেশি ঘাড় বঁাকাইয়া দেখিবার সুযোগ ছিল না ; তথাপি পুরোবতী সঙ্গীদের প্রতি পরীক্ষা-পদ্ধতির যতটুকু প্রয়োগ দৃষ্টিগোচর হইল, তাহাতে ভাবনার সীমা-পরিসীমা রহিল না। দেহের উপরাধ অনাবৃত করায় ভীত হইবে, অবশ্য বাঙালী ছাড়া এরূপ কাপুরুষ সেখানে কেহ ছিল না ; কিন্তু সম্মুখবতী সেই সাহসী বীর পুরুষগণকেও পরীক্ষায় চমকাইয়া চমকাইয়া উঠিতে দেখিয়া শঙ্কায়” পরিপূর্ণ হইয়া উঠিলাম। সকলেই অবগত আছেন, প্লেগ রোগে দেহের স্থানবিশেষ স্ফীত হইয়া উঠে। ডাক্তার সাহেব যেরূপ অবলীলাক্রমে ও নির্বিকার চিত্তে সেই সকল সন্দেহমূলক স্থানে হস্ত প্ৰবেশ করাইয়া স্ফীতি অনুভব করিতে লাগিলেন, তাহাতে কাঠের পুতুলেরও আপত্তি হইবার কথা। কিন্তু ভারতবাসীর সনাতন সভ্যতা আছে বলিয়াই তবু যা হোক একবার চমকাইয়া স্থির হইতে পারিতেছিল ; আর কোন জাত হইলে ডাক্তারের হাতটা সেদিন মুচড়াইয়া ভাঙ্গিয়া না দিয়া আর নিরস্ত হইতে পারিত না । সে যাই হোক, পাশ করা যখন অবশ্য কর্তব্য, তখন আর উপায় কি! যথাসময়ে চোখ বুজিয়া সর্বাঙ্গ সঙ্কুচিত করিয়া এক প্ৰকার* মরিয়া হইয়াই ডাক্তারের হাতে আত্মসমৰ্পণ করিলাম, এবং পাশ হইয়াও গেলাম। অতঃপর জাহাজে উঠিবার পালা। কিন্তু ডেক প্যাসেঞ্জারের এই অধিরোহণ-ক্রিয়া যে কি ভাবে নিম্পন্ন হয়, তাহা বাহিরের লোকের পক্ষে ধারণা করা অসাধ্য। তবে কলকারখানায় দাঁতওয়ালা চাকার ক্রিয়া দেখা থাকিলে বুঝা কতকটা সম্ভব হই বে। সে যেমন সুমুখের টানে ও পিছনের ঠেলায় অগ্রসর হইয়া চলে, আমাদেরও এই কাবুলী, পাঞ্জাবী, মাড়ওয়ারী, মাদ্রাজী, মারহাট্টি, বাঙালী, চীনা, খোট্টা, উড়িয়া গঠিত সুবিপুল বাহিনী শুদ্ধমাত্র পরস্পরের আকর্ষণ-বিকর্ষণের বেগে ডাঙ্গা হইতে জাহাজের ডেকে প্ৰায় অজ্ঞাতসারে উঠিয়া আসিল এবং সেই গতি সেইখানেই প্ৰতিরুদ্ধ হইল না । সম্মুখেই দেখিলাম, একটা গর্তের মুখে