পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত Rr একটা সামান্য অশিক্ষিতা স্ত্রীলোক। কিন্তু পাড়াগাঁয়ে এবং শহরে কি এমন অনেক শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত পুরুষমানুষ নাই, যাহাঁদের দ্বারা অনুরূপ হাস্যকর ব্যাপার। আজও প্ৰত্যহ অনুষ্ঠিত না হইতেছে ! এবং পাপের সমস্ত অন্যায় হইতে যাহারা শুদ্ধমাত্র খাওয়া-ছোওয়া বঁাচাইয়াই পরিত্রাণ পাইতেছে। তবে এমন হইতে পারে বটে, এদেশে পুরুষের বেলা হাসি আসে না, আসে। শুধু স্ত্রীলোকের বেলাতেই। আজি সন্ধ্যা হইতেই আকাশে অল্প অল্প মেঘা জমা হইতেছিল । রাত্রি একটার পরে সামান্য জল ও হাওয়া হওয়ায় কিছুক্ষণের জন্য জাহাজ বেশ একটুখানি দুলিয়া লইয়া পরদিন সকালবেলা হইতেই শিষ্ট-শান্ত হইয়া-চলিতে লাগিল। যাহাকে সমুদ্র-পীড়া বলে, সে উপসৰ্গটা আমার বোধ করি ছেলেবেলায় নৌকার উপরেই কাটিয়া গিয়াছিল ; সুতরাং বমি করার দায়টা আমি একেবারেই এড়াইয়া গিয়াছিলাম। কিন্তু, সপরিবার নন্দ মিস্ত্রীর কি দশা হইল, কি করিয়া রাত্ৰি কাটিল, জানিবার জন্য সকালেই নীচে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। কল্যকার গায়কবৃন্দের অধিকাংশই তখন উপুড় হইয়া পড়িয়া আছে। বুঝিলাম, রাত্রির ধকল কাটাইয়া ইহারা এখনও মহাসঙ্গীতের জন্য প্ৰস্তুত হইতে পারে নাই । নন্দ মিস্ত্রী ও তাহার বিশ বছরের পরিবার গম্ভীরভাবে বসিয়াছিল, আমাকে দেখিয়া প্ৰণাম করিল। তাহাদের মুখের ভাবে মনে হইল, ইতিপূর্বে একটা কলহের মত হইয়া গেছে। জিজ্ঞাসা করিলাম, রাত্রে কেমন ছিলে মিস্ত্রীমশাই ? নন্দ কহিল, বেশ । তাহার পরিবারটি তর্জন করিয়া উঠিল, বেশ, না ছাই ! মা গো মা, কি কাণ্ডই হয়ে গেল । একটু উদ্বিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, কি কাণ্ড ? নন্দ মিন্ত্রী আমার মুখের পানে চাহিয়া, হাই তুলিয়া, গোটা-দুই তুড়ি দিয়া, অবশেষে কহিল, কাণ্ড এমন কিছু নয় মশাই। বলি, কলকাতায় গলির মোড়ে সাড়েবত্রিশ-ভাজা বিক্রি করা দেখেছেন। দেখে থাকলে আমাদের অবস্থাটি ঠিক বুঝে নিতে পারবেন। সে যেমন ঠোঙার নীচে গুটি দুই-তিন টোকা মেবে ভাজা চাল-ডাল-মটীয়-কলাই-ছোলা-বরবটি,