পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্তু মুমুরি-খেসারি সব একাকার ক’রে দেয়, দেবতার কুপায় আমরা সবাই ঠিক তেমনি মিশিয়ে গিয়েছিলুম-এই খানিকক্ষণ হ’ল, যে যার কোট চিনে ফিরে এসে বসেচি। তাহার পর টগরের পানে চাহিয়া কহিল, মশাই, ভাগ্যে আসল বোষ্টমের জাত যায় না, নইলে টগর আমার টগর ক্ষিপ্ত ভল্ল কোব মত গৰ্জিয়া উঠিল—আবার ! ফের! না, তবে থাক, বলিয়া নন্দ উদাসীনের মত আর একদিকে চাহিয়া চুপ করিল। মূৰ্তিমান নোংরা একজোড়া কাবুলিয়ালা। আপাদমস্তক সমস্ত পৃথিবীর অপরিচ্ছন্নতা লইয়া অত্যন্ত তৃপ্তির সহিত রুটি ভক্ষণ করিতেছিল। ক্রুদ্ধ টগর নিনিমেষ দৃষ্টিতে সেই হতভাগাদিগের প্রতি তাহার অত বড় দুই চক্ষুর অগ্নিবর্ষণ করিতে লাগিল । নন্দ তাহাব পবিবারের উদ্দেশে প্রশ্ন করিল, আজ তা হ’লে খাওয়া-দাওয়া হবে না বল ? পরিবার কহিল,-মবণ আর কি ? হবে কি ক’রে শুনি ! ব্যাপারটা বুঝিতে না পারিয়া আমি কহিলাম, এই ত মোটে সকাল, একটি বেলা হ’লে- নন্দ আমার মুখের পানে চাহিয়া বলিল, কলকাতা থেকে দিব্যি এক হঁাড়ি রসগোল্লা আনা হয়েছিল মশায়, জাহাজে উঠে পৰ্যন্ত বলচি, আয় টগর, কিছু খাই, আত্মাকে কষ্ট দিস নে-নাঃ, রেঙ্গুনে নিয়ে যাবে। (টগরের প্রতি ) যা না। এইবার তোর রেঙ্গুনে নিয়ে ! টগর এই ক্রুদ্ধ অভিযোগের স্পষ্ট প্ৰতিবাদ না করিয়া ক্ষুব্ধ অভিমানে একটিবার মাত্র আমার পানে চাহিয়াই, পুনরায় সেই হতভাগ্য কাবুলিকে চোখের দৃষ্টিতে দগ্ধ করিতে লাগিল। আমি ধীরে-বীরে জিজ্ঞাসা করিলাম, কি হ’ল রসগোল্লা ? নন্দ টেগরের উদ্দেশে কটাক্ষ করিয়া বলিল, সেগুলোর কি হ’ল বলতে পারি নে। ওই দেখুন ভাঙা হাঁড়ি, আর ওই দেখুন বিছানাময় তার রস ; এর বেশি যদি কিছু জানতে চান ত ওই দুই হারামজাদাকে জিজ্ঞাসা করুন। } বলিয়া সে টগরের দৃষ্টি অনুসরণ করিয়া কট্‌মটু করিয়া চাহিয়া রহিল। আমি অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়া মুখ নীচু করিয়া বলিলাম, তা যাক, সঙ্গে চিড়ে আছে ত ।