পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এত বড় হইয়া উঠিতে পারে, এ কথা কল্পনার বাপের সাধ্যও নাই কাহাকেও জানায়।

মনে মনে বলিলাম, হে ঢেউ সম্রাট ! তোমার সংঘর্ষে আমাদের যাহা হইবে সে ত আমি জানিই ; কিন্তু এখনও তো তোমার আসিয়া পৌঁছতে অন্ততঃ আধ-মিনিটকাল বিলম্ব আছে, সেই সময়টুকু বেশ করিয়া তোমার কলেবরখানি যেন দেখিয়া লইতে পারি।

একটা জিনিসের সুবিপুল উচ্চতা ও ততোধিক বিস্তৃতি দেখিয়াই কিছু এ ভাব মনে আসে না ; কারণ, তা হইলে হিমালয়ের যে-কোন অঙ্গপ্ৰত্যঙ্গই তা যথেষ্ট। কিন্তু এই যে বিরাট ব্যাপার জীবন্তের মত ছুটিয়া আসিতেছে, সেই অপরিমেয় গতি শক্তির অনুভূতিই আমাকে অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছিল।

কিন্তু সমুদ্রজলে ধাক্কা দিলে যাহা জ্বলিয়া জ্বলিয়া উঠিতে থাকে, সেই জ্বলা নানা প্রকারের বিচিত্র রেখায় ইহার মাথার উপর খেলা করিতে না। থাকিলে, এই গভীরকৃষ্ণ জলরাশির বিপুলত্ব এই অন্ধকারে হয় ত তেমন করিয়া দেখিতেই পাইতাম না। এখন যতদূর দৃষ্টি যায়, ততদূর্বই এই আলোকমালা, যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্ৰ প্ৰদীপ জ্বালিয়া এই ভয়ঙ্কর সুন্দরের মুখ আমার চক্ষের সম্মুখে উদঘাটিত করিয়া দিল।

জাহাজের বাঁশী অসীম বায়ুবেগে থারথার করিয়া কাঁপিয়া কাঁপিয়া বাজিতেই লাগিল; এবং ভয়ার্ত খালাসীর দল আল্লার কর্ণে তাহাদের আকুল আবেদন পৌছাইয়া দিতে গলা ফাটাইয়া সমস্বরে চীৎকার করিতে লাগিল।

র্যাহার শুভাগমনের জন্য এত ভয়, এত ডাক-হঁক, এত উদ্যোগ-আয়োজন-সেই মহাতরঙ্গ আসিয়া পড়িলেন। একটা প্ৰকাণ্ড-গোছের ওলট-পালটের মধ্যে হরিবল্লভের মত আমারও প্রথমটা মনে হইল, নিশ্চয়ই আমরা ডুবিয়া গেছি; সুতরাং দুর্গানাম করিয়া আর কি হইবে। আশেপাশে, উপরে নীচে চারিদিকেই কালো জল । জাহাজসুদ্ধ সবাই যে পাতালের রাজবাড়িতে নিমন্ত্রণ খাইতে চলিয়াছি, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। এখন ভাবনা শুধু এই যে, খাওয়া-দাওয়াটা তথায় কি জানি কিরূপ