পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

g छैकाख নাই। এই সকলই সত্য ; তথাপি আমরা তিনটি প্ৰাণী যে মাথার উপর প্রচণ্ড সূৰ্য এবং পদতলে ততোধিক উগ্ৰ উত্তপ্ত বালুকারাশির উপরে, এক অপরিচিত নদীকূলে, এক রাশ মোট-ঘাট সুমুখে লইয়া কিংকৰ্তব্যবিমূঢ়ভাবে পরস্পরের মুখের দিকে চাহিয়া দাড়াইয়া রহিলাম, সে শুধু আমাদের তুরদুষ্ট । সহযাত্রীদের পরিচয় ইতিপূর্বেই দিয়াছি। তাহারা, যে-যাহার লোটা-কম্বল পিঠে ফেলিয়া, এবং অপেক্ষাকৃত ভারী বোঝাগুলি তঁহাদের গৃহলক্ষ্মীদের মাথার উপরে তুলিয়া দিয়া স্বচ্ছন্দে গন্তব্যস্থানে চলিয়া গেলেন। দেখিতে দেখিতে রোহিণীদাদা একটা বিছানার পুটুলিতে ভর দিয়া কঁাপিতে কঁাপিতে বসিয়া পড়িলেন । জ্বর, পেটেব অসুখ এবং চরম শ্ৰান্তি-এইগুলি এক করিয়া তাহার অবস্থা এরূপ যে, চলা ত ঢের দূরের কথা, বসাও অসম্ভব,--শুইয়া পড়িতে পারিলেই তিনি বঁাচেন । অভয়া স্ত্রীলোক। রহিলাম। শুধু আমি, এবং নিজেব ও পরেব নানা আকারের ছোট-বড় বেঁচেকা-বুচকিগুলি ! অবস্থাটা আমার একবার ভাবিয়া দেখিবাব মত বটে ! অকারণে চলিয়াছি ত এক অজ্ঞাত অশ্ৰীতিকর স্থানে ; এক স্কন্ধে ভর দিয়াছেন এক নিঃসম্পৰ্কীয়া নিরুপায় নারী, অপর স্কন্ধে ঝুলিতেছেন তেমনি অপবিচিত এক ব্যাধিগ্ৰন্ত পুরুষ ; মোটঘাটগুলা ত সব ফাউ! এই সকলের মধ্যে ভীষণ রৌদ্রে আকণ্ঠ পিপাসা লইয়া এক অজানা জায়গায় হতভম্ব হইয়া দাড়াইয়া আছি। চিত্ৰটি কল্পনা করিয়া, পাঠক হিসাবে লোকের প্রচুর আমোদ বোধ হইতে পারে ; হয় ত কোন সহৃদয় পাঠক এই নিঃস্বাৰ্থ পরোপকার-বৃত্তির প্রশংসা করিতেও পারেন ; কিন্তু বলিতে লজা নাই, এই হতভাগ্যের তৎকালে সমস্ত মন বিতৃষ্ণায় ও বিরক্তিতে একেবারে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল। নিজেকে সহস্ৰ ধিক্কার দিয়া মন বলিতেছিল, এত বড় গাধা ত্রিসংসারে কি আর কেউ আছে ! কিন্তু পরমাশ্চর্য এই যে, এ-পরিচয় তা আমার গায়ে লেখা ছিল না ; তবে এক-জাহাজ লোকের মধ্যে ভার বহিবার জন্য একাদণ্ডেই অভয়া আমাকে চিনিয়া ফেলিয়াছিল কি করিয়া ? কিন্তু আমার চমক ভাঙিল। তাহার হাসিতে। সে মুখ তুলিয়া একটুখানি হাসিল। এই হাসির চেহারা দেখিয়া শুধু আমার চমক নয়, তাহার ভয়ানক কষ্টটাও এইবার চোখে