পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਢ সহিত সাক্ষাৎ ঘটবে না । আর এমন আনন্দের পরিশ্রমও কখনও দেখি নাই। সারাদিন আমাদের সেবার জন্যেই ব্যস্ত, সমস্ত কাজ নিজেই করিতে চায়। সাহায্য করিবাব চেষ্টা করিলেই হাসিয়া বলিত, এ ত সমস্তই আমার নিজের কাজ। নইলে, রোহিণী:দাদার-ই বা এ কষ্টের কি আবশ্যক ছিল, আপনারই বা কি মাথা-ব্যথা পড়েছিল। এই জেলখানায় আসতে। আমার জন্যেই ত আপনাদের এত দুঃখ । হয়ত খাওয়া-দাওয়ার পরে একটি গল্প হইতেছে, অফিসের ঘণ্টায় দুটো বাজিতেই একেবারে উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, যাই, আপনার চা তৈরি ক’রে আনি-দুটো বাজল । মনে মনে বলিলাম, তোমাব স্বামী যত পাপিষ্ঠই হোন, পুরুষমানুষ ত! যদি কখনো তাকে পাও, তোমার মূল্য তিনি বুঝবেনই। তার পরে একদিন মিয়াদ ফুরাইল। দাদাও ভাল হইলেন, আমরাও সরকারী ছাডপত্ৰ পাইয়া আব্ব একবাব পোটলা-পুটলি বঁধিয়া রেজুন যাত্ৰা করিলাম। কথা ছিল, সহরেব মোসাফিরখানায় দুই-এক দিনের জন্য আশ্রয় লইয়া একটা বাসা তাহদের ঠিক করিয়া দিয়া, তবে আমি নিজের জায়গায় যাইব ; এবং যেখানেই থাকি, তঁাহার স্বামীর ঠিকানা জানিয়া ভঁাতাকে একটা সংবাদ পাঠাইবার প্রাণপণ চেষ্টা করিব। সহরে যেদিন পদাৰ্পণ করিলাম, সে দিনটি ব্ৰহ্মবাসীদের কি একটা পর্বদিন । আর পর্ব ত তাহাদের লাগিয়াই আছে। দলে-দলে ব্ৰহ্ম নরনাবী বেশমের পোষাক পরিয়া তাহাদের মন্দিরে চলিয়াছে। স্ত্রীস্বাধীনতাব দেশ, সুতরাং আনন্দ-উৎসবে তাহাদের সংখ্যাই অধিক। বুদ্ধা, যাবতী, বালিকা-সকল বয়সের স্ত্রীলোকই অপূর্ব পোষাক-পরিচ্ছদে সজ্জিত হইয়া, হাসিয়া, গল্প করিয়া, গান গাহিয়া সমস্ত পথটা মুখরিত করিষা চলিয়াছে। ইহাদের রঙ অধিকাংশই খুব ফর্সা, মেঘের মত চুলের বোঝা ত শতকরা নব্বই জন বৰ্মণীর হাঁটুর নীচে পড়ে। খোপায় ফুল, কানে ফুল, গলায় ফুলের মালা-ঘোমটার বালাই নাই, পুরুষ দেখিয়া ছুটিয়া পালাইবার আগ্ৰহাতিশয্যে হােঁচট খাইয়া উপুড় হইয়া পড়া নাই