পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ẽNN । নিঃসন্দেহ। সুতরাং এক মুহুর্তেই বুঝিতে পারিলাম, একটা রাগারগি ‘চলিতেছিল। তাই রোহিণীদার মুখ মেঘাচ্ছন্ন-তাই তার মরণ হইলেই তিনি বঁাচোন। নীরবে খাটের উপর গিয়া বসিলাম। অভয়া অনতিদূরে দাড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ভাল আছেন ? এতদিন পরে বুঝি গরীবদের মনে পড়ল ? খাবারের থালাটা দেখাইয়া কহিলাম, আমাৰ কথা পরে হবে ; কিন্তু এ কি ? অভয়া হাসিল। একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, ও কিছু না, আপনি কেমন আছেন, বলুন। কেমন আছি, সে ত নিজেই জানি না, পরকে বলিব কি করিয়া ? একটু ভাবিয়া কহিলাম, একটা চাকরির যোগাড় না হওয়া পর্যন্ত এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া কঠিন। বোহিণীবাবু যে বলছিলেন-আমাব মুখের কথা মুখেই রহিয়া গেল। রোহিণীদ তাহার ছেঁড়া চটিতে একটা অস্বাভাবিক শব্দ তুলিয়া পটু পটু শব্দে ঘরে ঢুকিয়া কাহারও প্রতি দৃকপাতমাত্র না করিয়া, জলের গেলাসটা তুলিয়া, এক নিঃশ্বাসে অৰ্দেকটা এবং বাকিটুকু দুই-তিন চুমুকে জোর করিয়া গিলিয়া ফেলিয়া, শূন্য গেলাসটা কাঠের মেঝের উপর ঠকাস করিয়া রাখিয়া দিয়া বলিতে বলিতে বাহির হইয়া গেলেন,--যাক, শুধু জল খেয়েই পেট ভরাই। আমার আপনার আর কে আছে। এখানে যে ক্ষিদে পেলে খেতে দেবে । আমি অবাক হইয়া অভয়ার প্রতি চাহিয়া দেখিলাম, পলিকের জন্য তাহার মুখখানি রাঙা হইয়া উঠিল ; কিন্তু তৎক্ষণাৎ আত্মসংবরণ করিয়া সে সহস্তে কহিল, ক্ষিদে পেলে কিন্তু জলের গেলাসের চেয়ে খাবারের থালাটাই মানুষের আগে চোখে পড়ে । রোহিণীদ সে কথা কানেও তুলিলেন না, বাহির হইয়া গেলেন ; কিন্তু অৰ্দ্ধ-মিনিট না যাইতেই ফিরিয়া আসিয়া কপাটের সম্মুখে দাড়াইয়া আমাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, সারাদিন অফিসে খেটে-খেটে, ক্ষিদেয়। গা-মাথা ঘুরছিল শ্ৰীকান্তবাবু-তাই তখন আপনার সঙ্গে কথা কইতে পারিনি, কিছু মনে করবেন না।