পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rysvg y3RR রাজলক্ষ্মী চক্ষের নিমেষে জানালার বাহিরে মুখ ফিরাইয়া বোধ করি তাহার হাসি মুখখানিই আমার মুগ্ধদৃষ্টি হইতে সরাইয়া লইল, এবং কোন উত্তর না দিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। অনেকক্ষণ পরে পরিহাসের সমস্ত চিহ্ন মুখের উপর হইতে অপসৃত করিয়া ফিবিয়া চাহিল। জিজ্ঞাসা করিল, তোমার কি জ্বর হয়েছিল ? ও-দেশের আবহাওয়া কি সহস্থ হচ্চে না ? কহিলাম, না হলে ত উপায় নেই। যেমন ক’রে হোক সহ্যু করিয়ে নিতেই হবে । আমি মনে মনে নিশ্চয়ই জানিতাম, রাজলক্ষ্মী এ কথার কি জবাব দিবে। কারণ, যে দেশের জল-বাতাস আজও আপনার হইয়া উঠে নাই, কোন সুদূর ভবিষ্যতে তাহাকে আত্মীয় করিয়া লইবার আশায় নির্ভর করিয়া সে যে কিছুতেই আমার প্রত্যাবর্তনে সম্মত হইবে না, বরঞ্চ ঘোর আপত্তি তুলিয়া বাধা দিবে, ইহাই আমাব মনে ছিল। কিন্তু সেরূপ হইল না । সে ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া মৃদুস্বরে বলিল, সে সত্যি। তা ছাড়া সেখানে আরো ত কত বাঙালী রয়েছেন। তঁদের যখন সইচে, তখন তোমারই বা সইবে না কেন ? কি বল ? আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে তাহার এই প্ৰকার উদ্বেগহীনতা আমাকে আঘাত করিল। তাই শুধু একটা ইঙ্গিতে সায় দিয়াই নীরব হইয়া রহিলাম। একটা কথা আমি প্রায়ই ভাবিতাম, আমার প্লেগের কাহিনীটা কিভাবে রাজলক্ষ্মীর শ্রুতিগোচর করিব । সুদূর প্রবাসে আমার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিস্থলে যখন দিন কাটিতেছিল, তখনকার সহস্ৰ প্ৰকার দুঃখের বিবরণ শুনিতে শুনিতে তাহার বুকের ভিতর কি ঝড় উঠবে, দুই চক্ষু প্লাবিত করিয়া কিরূপ অশ্রদ্ধার ছুটিবে, তাহা কত রসে, কত রঙে ভরিয়া যে, দিনের পর দিন কল্পনায় দেখিয়াছি, তাহা বলিতে পারি না । এখন সেইটাই আমাকে সবচেয়ে লজ্জায় বিধিল । মনে হইল, ছি ছি-ভাগ্যে কেহ কাহারো মনের খবর পায় না । নইলো-কিন্তু থাক গে সে-কথা। মনে মনে বলিলাম, আর যাহাই করি সেই মরণ-বাচনের গল্প আর তাহার কাছে করিতে যাইব না। বৌবাজারের বাসায় আসিয়া পৌছিলাম। রাজলক্ষ্মী হাত দিয়া