পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yiy o খবর নিয়েছি আপনারা গঙ্গামাটি যাচ্ছেন। আমার সঙ্গে একটা ভারী বাক্স আছে, সেটা যদি কতকটা পথ আপনাদের গাড়ীতে তুলে নেন - আমিও ওদিকেই যাচ্ছি। রাজলক্ষ্মী কহিল, সে আর বেশি কথা কি ? কিন্তু আপনি নিজে ? আমি হেঁটেই যেতে পারব। বেশি দূর নয়, ক্রোশ ছয়-সাত হবে । রাজলক্ষ্মী আর কিছু না বলিয়া রতনকে ডাকিয়া জল দিতে বলিল, এবং নিজে পরিপাটী করিয়া সাধুজীর খাবার সাজাইতে নিযুক্ত হইল। এই কাজটি রাজলক্ষ্মীর নিজস্ব বস্তু, ইহাতে তাহার জোড়া পাওয়া ভার। সাধু খাইতে বসিলেন, আমিও বসিলাম । বাজলক্ষ্মী খাবাবের ছাড়ি লইয়া পাশেই রহিল। মিনিট-দুই পরে বাজলক্ষ্মী আস্তে আস্তে জিঞ্জাসা করিল, সাধুজী, আপনার নামটি ? সাধু খাইতে খাইতে কহিলেন, বাজানন্দ । রাজলক্ষ্মী কহিল, বাপ রে বাপ ! ডাকনামটি ? তাহার কথার ধরনে চাহিয়া দেখিলাম তাহাব সমস্ত মুখখানি চাপা। হাসিব ছটায় উজ্জল হইয়া উঠিয়াছে ; কিন্তু সে হাসিল না, আমিও আহারে মন দিলাম। সাধুজী বলিলেন, সে নামের সঙ্গে আবি ত কোন সম্বন্ধ নেই! নিজেরও না, পরেরও না । বাজলক্ষ্মী সহজেই সায় দিয়া কহিল, তা বটে ; কিন্তু মুহুৰ্ত্তকাল পাবেই প্রশ্ন করিল, আচ্ছা সাধুজন, আপনি বাড়ী থেকে পালিয়েছেন কত দিন ? প্রশ্নটি অত্যন্ত অভদ্র। চাহিয়া দেখিলাম, রাজলক্ষ্মীর মুখে হাসি নাই বটে, কিন্তু যে পিয়ারীর মুখখানি আমি প্ৰায় ভুলিয়া গিয়াছিলাম এখন রাজলক্ষ্মীর প্রতি চাহিয়া চক্ষের নিমেষে আমার তাহাকেই মনে পড়িয়া গেল। সেই পুরানো দিনের সমস্ত সরলতা তাহার চোখে-মুখে কণ্ঠস্বরে যেন সজীব হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে ! সাধু একটা ঢোক গিলিয়া কহিলেন, আপনার এ কৌতুহল সম্পূর্ণ অনাবশ্যক । রাজলক্ষ্মী লেশমাত্র ক্ষুন্ন হইল না, ভাল মানুষটির মত মাথা নাড়িয়া কহিল, তা সত্যি। তবে, একবার নাকি ভারী ভুগতে হয়েছে ভাই-এই