পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9n *阿 জলচরণীয় কেহ নাই । সমস্তই ডোম এবং বাউরিদের বাস। বাউরিরা বেতের কাজ এবং মজুরি করে এবং ডোমের চাঙ্গায়ি, ফুলা, চুপড়ি প্ৰভৃতি প্ৰস্তুত করিয়া পোড়ামাটি গ্রামে বিক্রয় করিয়া জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামের উত্তর দিকে যে জল-নিকাশের বড় নালা আছে, তাহারই ওপারে পোডামাটি । শোনা গেল ও-গ্ৰামখানা বড় এবং উহাতে অনেক ঘর ব্ৰাহ্মণ, কায়স্থ ও অন্যান্য জাতির বাস আছে। আমাদের কুশারীমশায়ের বাটিও ওই পোড়ামাটিতেই ; কিন্তু পবের কথা পরে হইবে, আপাততঃ নিজেদের গ্রামের যে অবস্থা চোখে দেখা গেল তাহাতে দৃষ্টি জলে ঝাপসা হইয়া আসিল । বেচারীরা ঘরগুলিকে প্ৰাণপণে ছোট করিতে ত্রুটি করে নাই, তথাপি এত ক্ষুদ্র গৃহও যথেষ্ট খড় দিয়া ছাইবার মত খড় এই সোনার বাঙলা দেশে তাহদের ভাগ্যে জুটে নাই। একছটাক জমিজায়গা প্ৰায় কাহারও নাই কেবলমাত্ৰ চাঙ্গারি চুপড়ি হাতে বুনিয়া এবং জলের দামে গ্রামান্তবের সৎ-গৃহস্থের দ্বারে বিক্রয় করিয়া কি করিয়া যে ইহাদের দিনপাত হয় আমি তা ভাবিয়া পাইলাম না। তবুও এমন করিয়াই এই অস্পশ্যদের দিন চলিতেছে এবং হয়ত এমনি করিয়াই ইহাদের চিরদিন চলিয়া গিয়াছে, কিন্তু কোন দিন কেহ খেয়ালমাত্র করে নাই। পথের কুকুর। যেমন জন্সিয়া গোটা কয়েক বৎসব। যেমন-তেমন ভাবে জীবিত থাকিয়া কোথায় কি করিয়া মরে, তাহার যেমন কোন হিসাব কেহ কখন রাখে না, এই হতভাগ্য মানুষগুলারও ইহার অধিক দেশের কাছে একবিন্দু দাবিদাওয়া নাই। ইহাদের দুঃখ, ইহাদের দৈন্য, ইহাদের সর্ববিধ হীনতা আপনার এবং পরের চক্ষে এমন সহজ এবং স্বাভাবিক হইয়া গিয়াছে যে, মানুষের পাশে মানুষের এত বড় লাঞ্ছনা কোথাও কাহারও মনে লজার কণা মাত্র নাই, কিন্তু সাধু যে আমার মুখের প্রতি লক্ষ্য করিতেছিলেন আমি জানিতাম না । তিনি হঠাৎ কহিলেন, দাদা, এই হচ্ছে দেশের সত্যিকার ছবি ; কিন্তু মন খারাপ করবার দরকার নেই। আপনি ভাবচোন এসব বুঝি এদের অহরহ দুঃখ দেয়, কিন্তু তা মোটেই নয়। আমি ক্ষুব্ধ এবং অত্যন্ত বিস্মিত হইয়া কহিলাম, এটা কিরকম কথা হ’ল সাধুজী ?