পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত ¢bም অত্যন্ত সোজা পথ আছে। সম্মুখের শুষ্ক জল খাদটার উপরে যে সঙ্কীণ বঁাশের সঁকো আছে, তাহার উপর দিয়া গেলে মিনিট-দশোকের মধ্যেই যাওয়া যায়, কিন্তু গরুর গাড়ীতে অনেকখানি রাস্তা ঘুরিয়া ঘণ্টা-দুই বিলম্বে পৌছিতে হয়। এই দীর্ঘ পথটায় দুজনের মধ্যে আর কোন কথাই হইল না। সে কেবল আমার হাতখানা তাহার গলার কাছে টানিয়া লইয়া ঘুমানোর ছল করিয়া নিঃশব্দে পডিয়া রহিল। কুশারী-মহাশয়ের দ্বারে আসিয়া যখন গো-যান থামিল তখন বেলা দ্বিপ্রহর উত্তীৰ্ণ হইয়া গেছে। কৰ্ত্তা এবং গৃহিণী উভয়েই একসঙ্গে বাহির হইয়া আমাদের অভ্যর্থনা করিয়া গ্ৰহণ করিলেন, এবং অতিশয় সম্মানিত অতিথি বলিয়াই বোধ হয় সদরে না বসাইয়া একেবারে ভিতরে লইয়া গেলেন। তা ছাড়া, অনতিবিলম্বেই বুঝা গেল সহর হইতে দূৰ্ববৰ্ত্তী এই— সকল সামান্য পল্পী-অঞ্চলে অবরোধেব সেকপ কঠোৰ শাসন প্ৰচলিও নাই । কারণ, আমাদেব শুভাগমন প্ৰচারিত হইতে-না-হইতেই প্ৰতিবেশীদের অনেকেই যাহারা খুড়া, জ্যাঠা, মাসিমা ইত্যাদি গ্ৰীতি ও আত্মীয় সম্বোধনে কুশারী ও র্তাহার গৃহিণীকে আপ্যায়িত কবিয়া একে-একে, দুইয়ে-দুইয়ে প্ৰবেশ করিয়া “গামাসা দেখিতে লাগিলেন, তাহদের সকলেই অবলা নহেন । রাজলক্ষ্মীর ঘোমটা দিবাব অভ্যাস ছিল না, সেও আমাবাই মত সম্মুখের বারান্দায় একখানি আসনের উপর বসিয়া ছিল ; এই অপবিচিত বমণীর সাক্ষাতেও এই অনান্ডতের দল বিশেষ কোন সঙ্কোচ অনুভব কবিলেন না। তবে সৌভাগ্য এইটকু যে আলাপ কবিবার ঔৎসুকাটা নিতান্তই তাহাব প্ৰতি না হইয়া আমার প্রতিই প্ৰদশিত হইতে লাগিল । কৰ্ত্তা অতিশয় ব্যস্ত, তাহার ব্ৰাহ্মণীও তেমনি, কেবল বাড়ীর বিধবা মেয়েটিই রাজলক্ষ্মীর পাশে স্থির হইয়া বসিয়া একটা তালপাখা লইয়া তাহাকে মৃদু মৃদু বাতাস করিতে লাগিল । আর আমি-কেমন আছি, কি অসুখ, কতদিন থাকিব, জায়গাটা ভাল মনে হইতেছে কিনা, জমিদারী নিজে না দেখিলে চুরি হয়। কিনা, ইহার নুতন কোন বন্দোবস্ত করিবার প্রয়োজন বোধ করিতেছি কিনা, ইত্যাদি অর্থ ও ব্যর্থ নানাবিধ প্রশ্নোত্তরমালার ফঁাকে কুশারী-মহাশয়ের সাংসারিক অবস্থাটা একটু পৰ্যবেক্ষণ