পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত R পরেই আর অবিদিত রহিল না । তিনি চলিয়া গেলে তঁহার গৃহিণী। বলিলেন, নিরিামিষ আলো-চালের ভাত খান ; জুড়িয়ে গেলে আর খাওয়াই হয় না, তাই জোর ক’রে পাঠিয়ে দেওয়া ; কিন্তু তাও বলি বাবা, যারা অন্নদাতা তাদের পূবে নিজের বাড়ীতে অন্নগ্ৰহণ করাও কঠিন। কথাটায় মনে মনে আমার লজা করিতে লাগিল, বলিলাম। অন্নদাতা আমি নয় ; কিন্তু তাও যদি সত্য হয়, সেটুকু এত কম যে এটুকু বাদ 'গেলে বোধ করি আপনারা টেরও পেতেন না । কুশারীগৃহিণী ক্ষণকাল চুপ করিয়া রহিলেন। মনে হইল। ভঁাহার মুখখানি ধীরে ধীরে যেন অতিশয় মান হইয়া উঠিল । তার পরে কহিলেন, তোমার কথাটা নিতান্ত মিথ্যা নয়। বাবা, ভগবান আমাদের কিছু কম দেন নি, কিন্তু এখন মনে হয় এত যদি তিনি নাই দিতেন, হয়ত এর চেয়ে তঁর বেশি দয়াই প্ৰকাশ পেত । বাড়ীতে ওই ত কেবল একটা বিধবা মেয়ে-কি হবে। আমাদের গোলা-ভরা ধানে, কড়া-ভরা দুধে, আর কলসীকলসী গুড় নিয়ে ? এসব ভোগ করবার যারা ছিল, তারা ত আমাদের ত্যাগ ক’রেই চলে গেছে। ছলছল করিয়া আসিল এবং ওষ্ঠাধর ক্ষুরিত হইয়া উঠিল। বুঝিলাম অনেক গভীর বেদনাই এই কয়টি কথার মধ্যে নিহিত আছে। ভাবিলাম হয়ত তঁহার কোন উপযুক্ত পুত্রের মৃত্যু হইয়াছে, এবং ওই যে ছেলেটিকে ইতিপূবে দেখিয়াছি তাহাকে অবলম্বন করিয়া হতাশ্বাস পিতামাতা আর কোন সান্তনাই পাইতেছেন না । আমি নীরব হইয়া রহিলাম, রাজলক্ষ্মীও কোন কথা না কহিয়া কেবল তঁহার হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে টানিয়া লইয়া আমারই মত নিঃশব্দে বসিয়া রহিল ; কিন্তু আমাদের ভুল ভাঙিল। তঁহার পরের কথায়। তিনি আপনাকে আপনি সম্বরণ করিয়া লইয়া পুনশ্চ কহিলেন, কিন্তু আমাদের মত তাদেরও তা তোমরাই অন্নদাতা । কৰ্ত্তাকে বললাম, মনিবকে দুঃখের কথা জানাতে লজা নেই, আমাদের মাকে বাবাকে নিমন্ত্রণের ছল ক’রে একবার ধরে আন, আমি তাদের কাছে কেঁদে কেটে দেখি যদি ভঁরা এর কোন বিহিত করে দিতে পারেন। এই