পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত Og কত বড় দুর্ঘটনা, কত বড় নিরুপায় দুৰ্গতিতে এতগুলি নিশ্চিত নরনারী স্বলিত হইয়া পড়িবে তাহা নিঃসন্দেহে উপলব্ধি করিয়া আমারও ক্লেশবোধ হইল। এই মঠে মাত্র দুটি দিন আছি, কিন্তু কেমন যেন একটা আকর্ষণ অনুভব করিতেছি-ইহার আন্তরিক শুভাকাঙ্ক্ষা না কবিয়াই যেন পারি না এমনি মনোভাব। ভাবিলাম লোকে মিছাই বলে সকলে মিলিয়া আশ্রম-এখানে সবাই সমান ; কিন্তু একের অভাবে যে কেন্দ্ৰভ্ৰষ্ট উপগ্রহের মতো সমস্ত আয়তনই দিগ্বিদিকে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িতে পারে, তাহা চোখের উপরেই যেন দেখিতে লাগিলাম। বলিলাম, আব্ব শোবো না কমললতা, চলো তোমার সঙ্গে গিয়ে ফুল তুলে আনি গে। বৈষ্ণবী কহিল, তুমি স্নান করে নি, কাপড় ছাড়ে নি, তোমার ছোয়া ফুলে পুজো হবে কেন ? বলিলাম, ফুল তুলতে না দাও, ডাল নুইয়ে ধরতে দেবে তা ? vioe (UT so Josefa, 203 বৈষ্ণবী বলিল, ডাল নোয়াবার দরকার হয় না, ছোট ছোট গাছ, আমি নিজেই পাবি । বলিলাম, অন্ততঃ সঙ্গে থেকে দুটো সুখদুঃখের গল্প করতে পারবো ত ? তাতেও তোমার শ্রম লঘু হবে। এবার বৈষ্ণবী হাসিল, হঠাৎ বড় দরদ যে গোঁসাই-আচ্ছা চলো, আমি সাজিটা আনি গে, তুমি ততক্ষণ হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় ছেড়ে নাও। আশ্রমের বাহিরে অল্প একটু দূরে ফুলের বাগান। ঘন ছায়াচ্ছন্ন আমবনের ভিতর দিয়া পথ। শুধু অন্ধকারের জন্য নয়, রাশি কৃত শুকনো পাতায় পথের রেখা বিলুপ্ত। বৈষ্ণবী আগে, আমি পিছনে, তবু ভয় করিতে লাগিল পাছে সাপের ঘাড়ে পা দিই। বলিলাম, কমললতা, কথা ভুলবে না। ত ? বৈষ্ণবী বলিল, না । অন্ততঃ তোমার জন্যেও আজ পথ চিনে আমাকে চলতে হবে।