[ ७ ] দ্বিতীয় কথা—গ্রন্থের ভাষা । যাহারা ভাষাতত্ত্বের আলোচনা করেন, র্তাহাদের কাছেও এই গ্রন্থ পরম আদরে গৃহীত হইবে । চতুর্দশ শতাব্দীতে পশ্চিম বাঙ্গালার খাটি ভাষার নমুনা এই গ্রন্থে পাওয়া গেল । সেই ভাষা সম্পূর্ণ অবিকৃত ভাবে এখানে রক্ষিত হইয়াছে, তাহার উপরে হাত ফলাইতে কেছ অবকাশ পায় নাই । শূন্তপুরাণের ভাষা চণ্ডীদাসের ভাষা হইতে প্রাচীন বটে, কিন্তু শুষ্ঠপুরাণের পুথি তত পুরাণ পুথি মহে, কাজেই সেখানে নমুনা থাটি নাই। শাস্ত্রী মহাশয়ের আবিস্কৃত বৌদ্ধ গান ও দোহার ভাষা আরও প্রাচীন—এত প্রাচীন যে, ঐ ভাষা বাঙ্গালী বটে কি না, তাহ প্রতিপন্ন করিবার জন্ত শাস্ত্রী মহাশয়কে প্রয়াস পাইতে হইয়াছে। কিন্তু সেখানেও পুথির বয়স ও ভাষার বয়স সমান নহে, নমুনা হয় ত খাটি নাই। যাহা হউক, বৌদ্ধ গান ও দোহা,—তার পরে শূন্তপুরাণ,—তার পরে এই চণ্ডীদাস,— প্রাচীন বাঙ্গালী ভাষার ইতিহাস নিরূপণে পর পর এই তিনটা ধাপ পাওয়া গেল। এখন বাঙ্গালী ভাষার উন্নতি ও পরিণতি নিরূপণে ভাষাতত্ত্বের অধিকারী পণ্ডিতেরা দশ বৎসর ধরিয়া বিতণ্ড চালাইবার সুযোগ পাইলেন । বসন্তরঞ্জন বাবু নিজে ভাষাতত্ত্বের আলোচনায় স্থবিজ্ঞ—তিনি কোমর বাধিয়া এ সম্বন্ধে আলোচনা করিতে সৰ্ব্বদা প্রস্তুত। এই গ্রন্থেই পাঠকের তাহার সম্যক্ পরিচয় পাইয়াছেন। কৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থের শেষে তিনি যে টীকা যোগ করিয়াছেন, তাহাতে প্রত্যেক শব্দের আলোচনায় যে স্বক্ষ বিচার আছে, সংস্কৃত প্রাকৃত হইতে আরম্ভ করিয়া অসমীয়া, উড়িয়া, হিন্দী প্রভৃতি যে সকল প্রাদেশিক ভাষার সহিত তুলনামূলক আলোচনা আছে—তাহাতেই পাঠকেয়া র্তাহার বল পরীক্ষা করিবেন। আমি অব্যবসায়ী,-আঁমি তাহার উপর বরাত দিয়াই ক্ষান্ত থাকিলাম। বাঙ্গালী ভাষায় Etymology প্রকরণে এই গ্রন্থের নমুনা যেমন কাজে লাগিবে, আর কোন গ্রন্থ বোধ হয়, তেমন লাগিবে না । কেন না, ইহাতে যে নমুন আছে, তাহ খাটি নমুনা,-সাত নকলে আসল জিনিষটা নষ্ট হইতে পারে নাই। তার পরে তৃতীয় কথা —তবে সত্যই কি এই ভাষাই চণ্ডীদাসের ভাষা । যে চণ্ডীদাসের ভাষার ধ্বনি এত কাল আমাদের কাণের ভিতর দিয়া মরমে পশিয় আকুল করেছে মোদের প্রাণ–এই ভাষা কি সেই চণ্ডীদাসের ? এত কাল
পাতা:শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-বড়ুচণ্ডীদাস.djvu/৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।