পাতা:শ্রীমদভগবদগীতা - দেবেদ্রবিজয় বসু.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O8 শ্ৰীমদ-ভগবদগীতা। ক্ষত্ৰিয়-শক্তিকে অভিভূত করিয়া, কেবল ধৰ্ম্ম দ্বারা “মহাভারত’-রাজ্য ংস্থাপনই ভগবানের অভিপ্রেতি ছিল। মানুষের কি সাধ্য যে ভগবানের গৃঢ় অভিপ্ৰায়,-তাহার কল্পনা”বুঝিতে পারে। সে বিষয়ের আর আলোচনার প্রয়োজন নাই। যাহা হউক এস্থলে আর একটি কথার উল্লেখ প্রয়োজন। ‘গীতা’ ও ‘চণ্ডী’র আরম্ভ একই প্রকারের। দুৰ্য্যোধন প্ৰভৃতি, যাহারা পাণ্ডবদের নিতান্ত আততায়ী, তাহাদের জন্যও অৰ্জ্জুনের মমতা হইতেছিল, যুদ্ধ করিতে প্ৰবৃত্তি হইতেছিল না। সমগ্ৰ ধৰ্ম্ম-তত্বের সার মৰ্ম্ম বুঝাইয়া, তবে শ্ৰীকৃষ্ণ অৰ্জ্জুনের মোহ দূর করিলেন। ইহাই গীতার আরম্ভ। চণ্ডীতে আছে যে সুরথ রাজার অনুচরগণ বিশ্বাসঘাতক হইয়া তাহার রাজ্য লইল, সুরথকে বনবাসী করিল। আর সমাধি-নামক বৈশ্যের সংগৃহীত অর্থ তদীয় স্ত্রী পুত্ৰ আত্মসাৎ করিল, তাহাকে বনে তাড়াইয়া দিল। তথাপি উহাদের সেই অনুচর ও স্ত্রী পুত্র জন্য মমতা রহিয়া গেল। যে প্ৰকৃতির গুণ বা শক্তি অথবা মায়া হইতে এই মমতা প্ৰভৃতি আসক্তি জন্মে, তাহার তত্ত্ব বুঝাইয়াই মেধস ঋষি সুরথ ও সমাধিকে মোহ হইতে নিবৃত্ত করিতে পারিয়াছিলেন । এই মমত্ব বা অহঙ্কারই ধৰ্ম্মের অন্তরায় এবং এই দুইখানি অপূর্ব ধৰ্ম্মগ্রন্থেই সেই তত্ত্ব প্ৰধানতঃ বুঝান আছে। তাই বলিতেছিলাম, গীতার ও চণ্ডীর উপক্ৰমণিকায় অত্যন্ত সাদৃশ্য আছে। " আরও একটি কথা বুঝিতে হইবে। দুৰ্য্যোধনাদির ন্যায় যাহারা ঘোর আততায়ী, তাহদের উপর ক্ৰোধ হওয়াই সাধারণ লোকের স্বভাব। চিত্তের সেই স্বাভাবিক বৃত্তির দমন করিয়া, দয়া প্ৰভৃতি ধৰ্ম্মের বীজভূত সাত্বিক-সহানুভূতিবশে অর্জন কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইলেও তাঁহার ইন্দ্রিয় ও মন যে বশীভুত, তিনি যে “ দৈব-সম্পাদযুক্ত” তাহার পরিচয় দিয়াছেন। সুতরাং তিনি ধৰ্ম্মের গুঢ় তত্ব ধারণা করিবার অধিকারী ছিলেন। অনেক টীকাকারগণ যে তঁাহাকে নিয়াধিকারী বলিয়াছেন, তাহা সঙ্গত নহে ।