দ্বিতীয় অধ্যায় । * * কাটিয়া পাড়িলেও সে থাকিবে, কেন না তাহার আত্মা থাকিবে । একাদুশ শ্লোক পাঠে জানা যায় যে যখন গীত প্রণীক্ষ হয়, তখন জন্মাস্তুর জনসমাজে গৃহীত। একাদশ শ্লোকে অর্জুনের আপত্তি আশঙ্কা করিয়া, ভগবান তাঁহারই খণ্ডন করিতেছেন। অর্জুন বলিতে পারেন, আত্মা না হয় রহিল, কিন্তু যখন দেহ গেল, তখন “আমার আত্মীয় ব্যক্তি যাহার জন্য শোক করিতেছি সে আর রহিল কৈ ? দেহান্তর প্রাপ্ত হইলে সে ত ভিন্ন ব্যক্তি হইল । এই আপত্তির আশঙ্কা করিয়া ভগবান রয়োদশ শ্লোকে বলিতেছেন, যে এ রূপ ভেদ কল্পনা করা অঙ্কুচিত, কেন না যেমন কৌমার যৌবন জরা একব্যক্তিরই অবস্থাস্তুর মাত্র, তেমনি দেহান্তরপ্রাপ্তিও অবস্থাস্তৱ মাত্র । ইহাতেওঁ অৰ্জুন আপত্তি করিতে পারেন যে, না হয় স্বীকার করা গেল যে, দেহস্তিরে ও দেহীর একতা থাকে-কিন্তু মৃত্যুর একটা দুঃখ কষ্ট ত আছেই ? এই স্বজনগণ সেই কষ্ট পাইবে-তাছা স্মরণ করিয়া শোক করিব না কেন ? তাহদের বিরহে কাতর হইব না কেন ? তাহার উত্তরে ভগবান এই চতুর্দশ শ্লোকে বলিতেছেন, যে, যে সকলকে তুমি এই দুঃখ বলিতেছ, তাহ ইন্দ্রিয়ের বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সংযোগ-জনিত। যতক্ষণ সেই স যোগ থাকে ততক্ষণ সেই দুঃখ থাকে, সংযোগের অভাষে আর সে স্কুঃখ থাকে না । যেমন যতক্ষণ ত্বগের সঙ্গে রৌদ্রাদি উৰ্ত্তাপের বা হিমের শৈত্যের সংযোগ হয়, ততক্ষণ উষ্ণ বা শীত স্বরূপ যে দুঃখ তাহ। অকুভূত করি, রৌদ্রাদির অভাব হইলে আর তাহ থাকে না । . যাহ থাকিবে না, অনিত্য, তাহ সহ করাই উচিত । যে তঃথ সহ করিলেই ফুরাইযে, তাহার জন্ত কষ্ট বিবেচনা করিৰ কেন ?
পাতা:শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।