পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বংশ বিবরণ। প্রাচীন বংশপল্লী আলোচনা করা এক দুরূহ ব্যাপার । পুরাণাদি ......, শাস্ত্রগ্রন্থে ভারতীয় রাজ্যবর্গের পূর্ণ বংশ-লতা পাওয়া যায় না। সংগ্ৰহ করিবার বিবিধ বংশের মধ্যে র্যাহারা বিমল কীৰ্ত্তিশালী, ধৰ্ম্মপরায়ণ এবং প্রকৃতি*" পুঞ্জের হিতকামী ছিলেন, শাস্ত্রগ্রন্থে তঁহাদেরই নাম এবং কীৰ্ত্তিগাথা পাওয়া যায় ; সাধারণ ব্যক্তিগণের প্রতি শস্ত্রকারগণের দৃষ্টি পতিত হয় নাই। র্যাহারা মাতৃভূমি পরিত্যাগ করিয়া স্থানভ্রাট হইয়াছেন, তাহারা কীৰ্ত্তিমণ্ডিত হইলেও পৌরাণিক গ্রস্তে সকলের নাম গৃহীত হয় নাই। আবার এমন এক সময় গিয়াছে, যে কালে আদর্শ চরিত্র-কাহিনী কাল পরম্পরা কণ্ঠস্থ রাখা হইত। তৎকালে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গের নাম তাহাদের কীৰ্ত্তি-কলাপ দ্বারা স্মরণীয় হইত, বংশের অকৃতী সস্থানদিগকে অল্পকালের মধ্যেই লোকে ভুলিয়া যাইত । এই সকল কারণে অনেক স্থলে বংশাবলীর ক্রম-ভঙ্গ হইয়াছে ; বৰ্ত্তমানকালে তার তাতা উদ্ধার সাধনের উপায় নাই । সত্য, ত্রে তা প্রভৃতি যুগের যে সকল বিবরণ শাস্ত্রকারগণ পরিত্যাগ করিয়াছেন, তাহ চিরদিনের তরে বিস্মৃতির কুক্ষিগত হইয়াছে । আমাদের উদ্দিস্ট চন্দ্রবংশের বিবরণ আলোচনা করিতে গেলে দেখা যাইবে, এখানেও পুরাণ গ্রন্থসমূহের পরস্পর বৈষম্য রহিয়াছে। মহাভারতে ইলার পুত্র পুরূরবী হইতে পর্যায়ক্রমে চন্দ্রবংশীয় নৃপতিগণের বিবরণ বর্ণিত হইয়াছে, কিন্তু চন্দ্রের সহিত ইলা বা পুরারবার কি সম্বন্ধ, তদ্বিযয়ে কোন কথা পাওয়া যায় না । হরিবংশ প্রভৃতি গ্রন্থের বর্ণনায় ব্রহ্মর পুত্র অত্রি, অত্রির পুত্র চন্দ্র, চন্দ্রের আত্মজ বুধ, এবং বুধের ভনয় পুরূরবী ইত্যাদি নামসহ ধারাবাহিকভাবে বংশবলী পাওয়া যায় । পুরীরব হইতে যযাতি পৰ্য্যন্ত বংশ-ধারার মধ্যে কোন কোন পুরাণে নামের পার্থক্য ঘটিবার দৃস্টান্তও বিরল নহে। এলম্বিধ অনৈক্যের হেতু নির্দেশ করা দুঃসাধ্য। তবে, লিপিকার প্রমাদ যে ইহার একটা কারণ, তাহা বলা বোধ হয় অসঙ্গত হইবে না। এ স্থলে উল্লেখ করা যাইতে পারে—গান্ধারের পুত্রের নাম কোন গ্রন্থে ‘ধৰ্ম্ম এবং কোন গ্রন্থে ঘৰ্ম্ম' লিখা হইয়াছে। ধৰ্ম্ম বা ঘৰ্ম্মের পুত্রের নাম কেহ বলেন ‘প্লুত কেহ বলেন 'বৃত । এতদ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায়, লেখকগণ ধ’ বর্ণকে ‘ঘ’ অথবা ‘ঘ’ বর্ণকে "ধ’ লিখিয়া এই ব্যতিক্রম ঘটাইয়াছেন । এরূপ দৃষ্টান্ত আরও পাওয়া যাইবে । কেবল নামের বৈকল্য ঘটিয়াছে এমন নহে, কোন কোন স্থলে পুরুষ সংখ্যারও বৈলক্ষণ্য দেখা যায়, ইহার দৃষ্টান্ত পূর্বে একবার দেওয়া হইয়াছে, এ স্থলে আর একটীর উল্লেখ করা যাইতে পারে। কোন কোন পুরাণের মতে রুহু্যর পুত্র বভ্ৰ, বভ্রর আত্মজ সেতু । আবার কোন কোন পুরাণে দ্রুহু্যর পুত্র সেতু লিখিত হইয়াছে, বভ্রর নামোল্লেখ নাই। এবম্বিধ পার্থক্যও