পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হস্তী-বিজ্ঞান । রাজমালা দ্বিতীয় লহরের অনেকস্থলেই হস্তীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশেষতঃ শ্বেত হস্তীর বিবরণ পাওয়া গিয়াছে। বন্য হস্তী ত্রিপুরার বিপুল সম্পদ। একমাত্র হস্তীর নিমিত্তই এই রাজ্যের উপর মুসলমানগণের লোলুপ দৃষ্টি পতিত হইয়াছিল, এবং তজ্জন্যই উহার বারম্বার রাজ্য আক্রমণ ও নানাবিধ বিপ্লব উপস্থিত করিয়াছেন। হস্তী সম্বন্ধে অনেক জ্ঞাতব্য বিষয় আছে। প্রাচীন ঋষিগণ এ বিষয় বিশেষভাবে আলোচনা করিয়াছেন এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ এতদ্বিষয়ক অনেক তথ্য অবগত আছেন। তৎসমুদয় অবলম্বনে এস্থলে স্থূল বিবরণ প্রদান করা যাইতেছে। প্রাচীনকালে ত্রিপুরার জঙ্গলে হস্তীর সংখ্যা অত্যন্ত বেশী ছিল। বর্তমানকালেও রাজ্যের প্রায় সকল অঞ্চলেই হস্তী পাওয়া যায়, কিন্তু পূর্বের তুলনায় সংখ্যা হ্রাস হইয়াছে। পার্বত্য প্রদেশে লোকালয় বৃদ্ধি পাওয়ায়, অনেকস্থলে হস্তীর গমনাগমনের পথ রুদ্ধ হইয়াছে। হস্তীযূথ জনতার সন্নিকটে বিচরণ করিতে চাহে না । এই কারণে অনেক হস্তী দূরবর্তী গভীর অরণ্যে, কিম্ব রাজ্যের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। হস্তী সংখ্যা হ্রস্ব হইবার ইহা একটা প্রধান কারণ । এতদ্ব্যতীত কুকি, চাখমা ও মঘ প্রভৃতি অনেক পার্বত্য জাতি গজদন্ত চুরি করিবার উদ্দেশ্বে এবং মাংস সংগ্রহের নিমিত্ত সুযোগ পাইলেই বড় বড় গুণ্ডা (পুং হস্তী) বধ করিয়া থাকে। পুং হস্তীর সংখ্যা সাধারণতঃই কম, তাহ আবার মনুষ্য কর্তৃক নিহত হওয়ায়, দিন দিনই সংখ্যা কমিয়া যাইতেছে । ইহা হস্তাবংশ বৃদ্ধির আর এক অন্তরায় { ভারতের অনেক প্রদেশেই বন্য হস্তী পাওয়া যায়, কিন্তু ত্রিপুরা পৰ্ব্বতের স্যায় সুন্দর এবং স্বাস্থ্যবান হস্তী অন্যত্র দুল্লভ। রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের হস্তী অপেক্ষ উত্তরভাগের হস্তী দীর্ঘজীবী এবং অধিক বলশালী । হস্তীব স্বভাব অনেক পরিমাণে মামুষের স্বভাবের সহিত তুলনা করা যাইতে পারে। এই কারণেই প্রাচীন ঋষিগণ মনুষ্য সমাজের স্যায় হস্তীদিগকেও ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্ব ও শূদ্র এই চারি জাতিতে বিভক্ত করিয়াছেন। শাস্ত্রোক্ত লক্ষণাদি দ্বারা তাহ বাছিয়া লইতে হয়। এই চারি জাতীয় হস্তীকে আবার প্রধানতঃ আট ভাগে বিভক্ত করা হইয়াছে, তদ্বিবরণ পরে দেওয়া হইবে । হস্তী সমূহ যুথবদ্ধ হইয়া অবস্থান ও বিচরণ করে। একটী বয়ঃজ্যেষ্ঠা কুনকী (হস্তিনী) দলের নেত্রী হয়, তাহার ইঙ্গিত মতে সমগ্র দল পরিচালিত হইয়৷ থাকে। স্থানীয় ভাষায় এই কুনকীকে পালমাই’ বা ‘চরাল কুনকী বলা হয়। গুণ্ডাগুলি অধিক বলশালী এবং সাহসী হইলেও অসতর্ক এবং অধিকাংশ সময় মদমত্ত অবস্থায় থাকে। বিশেষতঃ দলমধ্যে নতন বাচ্চ জমিলে তাহাকে বধ করিবার