কাশীতে বসিয়া সনাতনে শিক্ষা দিলা।
সনাতনে শিক্ষাকালে অনেক কহিলা॥
অকামনা প্রেম ভক্তি কেবলার রীতি।
আপনি বা তাহা কই পারিল বর্ত্তাইতি॥
কেবলার রীতি এই কৃষ্ণেতে ঐকান্তি।
তার আগে ভুক্তি মুক্তি সকলি অশান্তি॥
কৃষ্ণগত প্রাণ হ’বে কৃষ্ণ সুখে সুখী।
কার দেহ লয়ে প্রভু মারে ঝাকি ঝুকি॥
কৃষ্ণেতে অর্পিত দেহ এ দেহ কৃষ্ণের।
আছুক অন্যের কার্য নিজে হৈল ফের॥
হাত পা বাহির হ’য়ে সন্ধি কল ছুটে।
কচ্ছপ আকার হ’য়ে ক্ষণে পৈশে পেটে॥
যদ্যপি প্রভুর মনে থাকে কোন ভাব।
যা দেখিনু তা লিখিনু গ্রন্থের যে ভাব॥
তবেত প্রভুর মনে কামনা রহিল।
অকমনা প্রেমভক্তি কই পাওয়া গেল॥
কামনা রহিল আছে দৃষ্টান্ত তাহার।
অদ্বৈতের করে ধরি বলে বার বার॥
বৈকুণ্ঠাদ্যে নাহি যেই লিলার প্রচার।
শেষ যে করিব লীলা মোরে চমৎকার॥
তুমি আমি নিত্যানন্দ এই তিন জন।
করিব নিগূঢ় লীলারস আস্বাদন॥
তুমি হ’বে রামচন্দ্র আমি শ্রীনিবাস।
দাদা নিত্যানন্দ হবে নরোত্তম দাস॥
শেষ লীলা তিন জন করিল আসিয়া।
প্রচারিল প্রেমভক্তি খেতর যাইয়া॥
নিগূঢ় ভজন লীলা করে তিন জন।
ভাগ্যবান ভক্ত যারা করে দরশন॥
তাদের ভজনগ্রন্থ পড়ে দেখ ভাই।
অকামনা প্রেমভক্তি তাতে বর্ত্তে নাই॥
উদ্দেশ্য থাকিল পুন আসিয়া ধরায়।
ঐ প্রেম আস্বাদিবে তিন মহাশয়॥
সে কারণ অবতার হৈল প্রয়োজন।
সফলা নগরী যশোমন্তের নন্দন॥
শচীর নন্দন যাবে পড়ে পাঠশালে।
পড়ুয়ার সঙ্গে সদা হরি হরি বলে॥
যে জন না বলে হরি কর্ম্মসূত্রে মরে।
ঠেঙ্গা ল’য়ে যায় প্রভু তারে মারিবারে॥
সেই গিয়া করে সায় পাষণ্ড সঙ্গেতে।
মারিব মিশ্রের সুতে আইল মারিতে॥
অন্তর্য্যামী ভগবান জানিলেন চিতে।
এরূপে না পারিলাম হরিনাম দিতে॥
একবার মাতাকে দিলাম পরিচয়।
গ্রহণের বেড়ি গড়ি দিল মোর পায়॥
স্বীয় পরিচয় তাহে দিবার কারণে।
উদয় হইনু হাত গণকের স্থানে॥
সে মোরে গনিয়া বলে নন্দের নন্দন।
এবে শচীসুত জীব উদ্ধার কারণ॥
কর্ম্মসুত্রে বদ্ধ জীব না চিনিল মোরে।
গণিয়া দেখিয়া বলে একি হ’তে পারে॥
প্রভু কন তার পূর্ব্ব জন্মে কেবা আমি।
ঠিক করি গণনা করহ দেখি তুমি॥
গণক বলেন ছিলে অযোধ্যায় ধাম।
কৌশল্যা জননী পিতা দশরথ নাম॥
তুমি ছিলা রামচন্দ্র জগতের মূল।
ফিরে বলে এ গণনা হইয়াছে ভুল॥
বদ্ধ কর্ম্মসুত্রে জীবে উদ্ধারি কেমনে।
কাঙ্গাল হইব আমি তাহার কারণে॥
কেশ মুড়ি কড়া ধরি হইব কাঙ্গাল।
ঘরে ঘরে মেগে খাব হইয়া বেহাল॥
কাঁদিয়া কাঁদিয়া পুরাইব মনস্কাম।
হাতে ধরি পায়ে ধরি দিব হরিনাম॥
কাঙ্গাল দেখিয়া মোরে দয়া উপজিবে।
চিত্ত দ্রবীভূত হ’য়ে হরিনাম ল’বে॥
মুকুন্দ মুরারী আর নিত্যানন্দ ল’য়ে।
কহিলেন মনোকথা নিভৃতে বসিয়ে॥
পরে কহিলেন শচী মাতাকে কাঁদিয়া।
তাহা শুনি শচীরাণী অধৈর্য্য হইয়া॥
কহিছেন শচী মাতা বাপরে নিমাই।
ছেড়ে যদি যাও রাখিবার সাধ্য নাই॥
অনেক প্রলাপ মাতা করিল তাহাতে।
সান্ত্বনা করিল মাকে মধুর বাক্যেতে॥
শচী বলে তুমি যদি মোরে ছেড়ে যাবে।
এ ব্রহ্মাণ্ডে তবে আর মাতা কে মানিবে॥
এ সময় গৌরাঙ্গ করিল অঙ্গীকার।
তোমাকে ছাড়িতে মাতা শক্তি কি আমার॥
শোধিতে নারিব মাতা তব ঋণ ধার।
জন্মে জন্মে তব গর্ভে হ’ব অবতার॥
ধর্ম সংস্থাপন আর জীবের উদ্ধার।
এরূপ লইব জন্ম আর দুইবার॥