নানা মত করি কলি জীব ভুলাইল।
শাস্ত্র ছাড়া মত কত কলি দেখাইল॥
মাতা পিতা না মানে না মানে গুরুজন।
নারী বাধ্য পিতা করে পুত্রে বিসর্জ্জন॥
আর দেখ গৌরাঙ্গের মত যত ছিল।
তাহার মধ্যেতে কলি কত মত দিল॥
গৌরাঙ্গের মত প্রায় লোপ হ’য়ে যায়।
নরোত্তম শ্রীনিবাস এসে এ সময়॥
দুই প্রভু শেষ লীলা করিল উজ্জ্বল।
মধুর মাধুর্য্য প্রেম প্রকাশি সকল॥
আবার হইল লোপ কলির মায়ায়।
গোস্বামীর ধর্ম্ম বলি বিপথ লওয়ায়॥
প্রকৃতি হইয়া প্রেম করিল শোষণ।
চমকিত হইল যত সাধকের গণ॥
বীরভদ্র প্রিয়শিষ্য চারিজন ছিল।
প্রতিজ্ঞা করিয়া তারা কহিতে লাগিল॥
যথাকার বিন্দু মোরা তথায় পাঠাব।
প্রকৃতির স্থানে বিন্দু কিছু না রাখিব॥
বনচারী, অখিলচাঁদ সেবা কমলিনী।
হরিগুরু এই চারি সম্প্রদায় জানি॥
পূর্ব্ব পূর্ব্ব মহাজন যে ধর্ম্ম যাজিল।
বিরভদ্র সেই ধর্ম্ম শিষ্যে জানাইল॥
প্রকৃতি আশ্রয় করি সিদ্ধি প্রাপ্ত হ’ল।
সে কারণ চারিজন প্রতিজ্ঞা করিল॥
আধুনিক সেই ধর্ম্ম শুনিয়া শ্রাবণে।
প্রকৃতি আশ্রয় লোভে শিক্ষাগুরু জানে॥
গৃহধর্ম্ম ত্যাগ করি পচা গৃহী হয়।
করয় প্রকৃতিসঙ্গ ধর্ম্ম নাহি রয়॥
বুঝিতে না পারে ধর্ম্ম করে নারীসঙ্গ।
হাতে তালি দেয় কলি দেখিয়া সে রঙ্গ॥
বিধবা হইলে কোন যুবতী রমণী।
গর্ভবতী হ’লে তারে ভেক দেয় আনি॥
পচাগৃহী শিষ্য করি রাখে যে তাহারে।
সেই গর্ভে পুত্র হ’লে সেবাইত করে॥
জাতিতে বৈরাগী তার হয় পরিচয়।
করতালি দেয় কলি দেখিয়া তাহায়॥
শ্রীগৌরাঙ্গ প্রভু যবে প্রেম প্রচারিল।
সভক্তি দুর্ল্লভ প্রেম জীবে শিক্ষা দিল॥
চারিং চিরাৎ যেই প্রেম ছিল অনর্পিত।
বিরিঞ্চি বাঞ্ছিত প্রেম নামের সহিত॥
বিলাইল সেই প্রেম নামরসে মাখা।
তাহা দেখি চিত্রগুপ্ত ছেড়ে দিল লেখা॥
যমরাজা ছাড়ে ধর্ম্মাধর্ম্মের বিচার।
অবসর হ’য়ে কহে গেছে অধিকার॥
তাহা শুনি কলিরাজ ছয় রিপু লয়ে।
যমচিত্রগুপ্ত স্থানে উত্তরিল গিয়ে॥
কলিরাজা ডাকে মহামায়াকে স্মরিয়া।
মহামায়া এল কলি সাপক্ষ হইয়া॥
কলি কহে ধর্ম্মরাজ কেন অবসর।
চিত্রগুপ্ত লেখা ছাড়ে কেমন বর্ব্বর॥
চিত্রগুপ্ত বলে খাতা রাখিব কি জন্য।
লেখা পড়া দুটা মোর পাপ আর পূণ্য॥
পাপ গেল পূণ্য গেল লেখা গেল মোর।
এবে কি লিখিব যা বিধির অগোচর॥
যম কহে অধিকার গিয়াছে আমার।
পাপ পূণ্য শূন্য কার করিব বিচার॥
কলি কহে মম অধিকার যদি রয়।
তোমার এ অধিকার থাকিবে নিশ্চয়॥
লোভ কহে আমি লোভাইব সব সাধু।
প্রেমমধ্যে দেখাইব নারী মুখবিধু॥
এককালে লোভাইব বৈরাগী সকল।
পঞ্চ রসিকের ক্রিয়া দিয়া নারী কোল॥
গৌরাঙ্গের সঙ্গে হরি কীর্ত্তন ভিতরে।
নারী আর পুরুষ মাতাব একেবারে॥
দুইরূপ বৈরাগীরা গৌড়িয়া বাতুল।
জাতি লয়ে দলাদলী ভুলাইব মূল॥
মদ কহে মাৎসর্য্য জন্মাব দম্ভ সহ।
নামে প্রেমে মন মজা’তে নারিবে কেহ॥
কাম কহে বৈস গিয়া তব রাজপাটে।
তব অধিকার দিব প্রেম নিব লুটে॥
মহাজনী পথবলি দেখাইব পথ।
চৈতন্যের মত ছাড়ি ডুবিবেক সৎ॥
শিবের চৌষাট্টি নিশা দ্বাদশ পাগল।
ইহাদিকে লইয়া বলা’ব হরিবোল॥
পরাৎপর ব্রজরস প্রভু নিজ ধর্ম্ম।
বেদাতীত গূঢ়ত্ব যা বিধির অগম্য॥
তাহা দেখাইয়া ভুলাইব কতগুলি।
নারী লুব্ধ করাইব মজা’ব সকলি॥
শ্রীনিবাস চৈতন্যের মত গোড়াইব।
তার মধ্যে অন্য অন্য মত চালাইব॥