পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড এই স্থানেই ঘোষদেব বাড়ী ছিল। দেও বংশ সম্বন্ধে নানা আখ্যায়িকা প্রচলিত আছে; এবং সারঙ্গ দেও ও খেচু দেও নামে দুই ভ্রাতা ছিলেন, ইহারা অর্থশালী ব্যক্তি ছিলেন। সারঙ্গ দেওয়ের সঙ্গে ১২০ সংখ্যক কোদালি থাকিত, ইহাদের দ্বারা সারঙ্গ বহু সংখ্যক পুষ্করিণী খনন করাইয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। তন্মধ্যে দেওদের বাড়ীর সম্মুখবত্তী দীঘী বৰ্ত্তমানে দলদামে আবৃত হইলেও, ২০/২৫ হাত লম্বা বংশ দণ্ড দ্বারাও তাহার নিম্নের ভূমি পাওয়া যায় না, ইহা এতই গভীর। সারঙ্গের একটা কীৰ্ত্তি অতুলনীয়। একজন ব্রাহ্মণ দৈন্য বশতঃ ইচ্ছা সত্ত্বেও চতুষ্পাঠী স্থাপন করিতে পারিতেছেন না জানিয়া সারঙ্গ তাহাকে নিজ বাড়ী দান করেন ও স্বয়ং বৰ্ত্তমান বারুই গ্রামে চলিয়া যান। সদ্ব্যয়-বাহুল্যে সারঙ্গের অর্থ জলের ন্যায় বহির্গত হইয়া গিয়াছিল । জন সাধারণে অদ্যাপি একটা জনশ্রুতির উল্লেখ করে যে, ধলাই বিল হইতে যে খাল বহির্গত হইয়াছে, সারঙ্গের টাকা ঐ খাল দিয়া বহির্গত হইয়া যায়; এজন্য ঐ খাল “টাকা খাল" নামে কথিত হইয়া থাকে। মাত্র ১০/১২ বৎসর হইল, দেও বংশের শেষ বংশধরের মৃত্যু হইয়াছে। লাউতার দেব-গ্রামে দেব বংশীয়ের বাস। দেব বংশের বিশেষ বিবরণ আমরা প্রাপ্ত হই নাই। এবংশে ইদানীং শ্যামসুন্দর দেব সৰ্ব্বসাধারণের অনুরাগ ভাজন ছিলেন। তিনি স্বীয় চরিত্রগুণে লেখ্যবৃত্তি দ্বারা প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। দেব বংশের গৌরব স্বরূপ শ্রীযুক্ত রায় দুলাল চন্দ্র দেব বাহাদুর তাহারই পুত্র। লাতুর বংশোল্লেখ করিমগঞ্জ সবডিভিশনে লাতু এক প্রসিদ্ধ স্থান। পূৰ্ব্বে রাজস্ব সংগ্রহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন কেন্দ্র গঠিত হইয়াছিল। ঐ কেন্দ্রগুলি জিলা বলিয়া কথিত হয়। পূৰ্ব্ব শ্রীহট্টের রাজস্ব আদায়ের কেন্দ্র বা জিলা লাতুতে স্থাপিত হওয়ায় লাতু এক বিশিষ্ট গ্রামে পরিণত হয়। বহু পূৰ্ব্বে যখন এঅঞ্চলে ভদ্র বসতি স্থাপিত হয় নাই, তখন জাতু, আতু, পাতু ও লাতু নামে কয়েকটি কুকি সর্দার এ স্থানে বাস করিত, তাহদের অধিকৃত স্থানই পরে তাহাদের নামে খ্যাত হয়। এই স্থানে কুকিদের বারটি পাড়া ছিল, এই পরগণা তাহাতেই বারপাড়া বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছিল। লাতুর বাজারের দক্ষিণে একটি ক্ষুদ্র টীলা “মালগড়ের টীলা" বলিয়া খ্যাত, এই টালাতে তৎকালে গৃহাদি ছিল এবং সংগৃহীত রাজস্বদি রক্ষিত হইত। "মাল” অর্থাৎ রাজস্ব এখানে থাকিত বলিয়া টীলাটী “মালগড়" নামেই খ্যাত হয়। তখন লাতুতে একটি মুন্সেফ কোর্ট স্থাপিত হইয়াছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ পঞ্চখণ্ডের ন্যায় আমরা লাতুর কোন বংশেরই বিবরণ এাপ্ত হইতে পারি নাই। লাতুর স্বামী বংশ কি দত্ত বংশ অথবা অষ্টপতি বংশের বিবরণ আমরা প্রাপ্ত হই নাই। স্বামী বংশে পূৰ্ব্বে অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন বলিয়া শোনা যায়। কথিত রন্ধন পাত্রে অবশিষ্ট থাকিত, তৎসমস্তই খাইয়া যাইত। প্রায় প্রত্যহই এইরূপ ঘটিত, ইহাতে উত্যক্ত হইয়া গৃহস্বামী একদিন গোপন ভাবে থাকিয়া চোরের প্রতীক্ষা করেন নিয়মিত সময়ে চোর আসিল, গৃহস্বামী দেখিলেন যে তাহার অন্নচোর মানুষ নহে—বনমানুষ; তখন তিনি লগুর দ্বারা আক্রমণ পূৰ্ব্বক একটিকে প্রাণে বধ করিলেন, অন্যটি পলাইল । সেই হইতে না কি তাহাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, এবং ইহা না কি বনমানুষের অভিশাপের অথবা তাহার হত্যাপরাধের ফল। আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল না থাকিলেও ইদানীন্তন কালে স্বামী বংশে গুরুপ্রসাদ ও তৎপুত্র গোকুল রাম স্বামী বড়ই উদার ও প্রশস্তমনা পুরুষ ছিলেন, গোকুলরামের জ্যেষ্ঠপুত্র গোপীচরণ স্বামী; ইহার কনিষ্ঠ সহোদর স্বচেষ্টায় অবস্থার অনেকটা উন্নতি বিধান