পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[চবিবশ] প্রার্থনা করে, ব্রাহ্মণ, যজ্ঞ কৰ্ত্তা ব্যক্তিকে চাহে।” ৯/১১২/২- ঐ । ইহাতে কি বুঝা যায় না যে তখন ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপ কাৰ্য্য নির্দিষ্ট ছিল? যদি তাহা হয়, তবে ইহা জাতি বিভাগানুরূপ কাৰ্য্য বিভাগ নহে কি? যাহাদের মতে চারিজাতির উৎপত্তি ক্রমান্বয়ে পরে পরে হইয়াছে, তাহারা বলেন যে কৰ্ম্মানুক্রমেই জাতি চতুষ্টয়ের উৎপত্তি হইয়াছে। স্কুল দৃষ্টিতে ইহাই প্রকৃত ও যুক্তিযুক্ত বোধ হয় বটে; কিন্তু শাস্ত্রের অভিপ্রায় বোধ হয় অন্যরূপ; গীতা-শাস্ত্রে লিখিত আছে, যথা— “চাতুৰ্ব্বণাং ময়াসৃষ্টং গুণকৰ্ম্ম বিভাগশঃ"। শাস্ত্রতত্ত্ব বুঝিতে হইলে পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী ব্যাখ্যাতৃবর্গের অভিপ্রায় অগ্রাহ্য করা সমীচীন বোধ হয় না। আধ্যাত্মিক ভাব এবং শাস্ত্রজ্ঞান তাহদের যে অপেক্ষাকৃত অধিক ছিল, তাহার আর সন্দেহ নাই। তাহারা “সৃষ্টং" শব্দে কি বুঝিয়াছেন? সৃষ্টং' শব্দ থাকাতে বুঝিতে আপত্তি কি যে, সৃষ্টির সময় হইতেই গুণ ও কৰ্ম্মানুসারে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের উৎপত্তি?— সত্ব-রজাদি গুণতারতম্যে যে চারি জাতির সৃষ্টি হয় নাই, চারি জাতি স্বীয় স্বীয় বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয় নাই, তাহা কে বলিবে? বিশেষতঃ মনুষ্যের জন্মের পর অভিপ্রায়ানুরূপ বৃত্তি গ্রহণে জাতি নিরূপিত হইয়াছে বলিলে, বৃত্তির পূৰ্ব্ববৰ্ত্তিতায় সেই বিভিন্ন জাতির কথাই আসিয়া পড়ে। কারণ কেহ গ্রহণ না করিলে তাহা বৃত্তি বলিয়া গণ্য হয় না। তাহা হইলে "সৃষ্টং" শব্দও ব্যবহৃত হইত না এবং বিশ্বামিত্রাদির ব্রাহ্মণতলাভের বিশেষত্ব থাকিত না ১ ফলতঃ ক্ষত্রিয়াদির এতদ্রুপ ব্রাহ্মণত্ব লাভের উদাহরণের বিশেষত্ব হইতেই অনুভূত হয় যে, বর্ণভেদ সাধারণ গুণকৰ্ম্মাশ্রিত নহে,— ইহা বিশিষ্ট গুণকৰ্ম্মসদ্ভূত ॥২ সাধারণ কৰ্ম্মবিভাগ হইতে বর্ণভেদ হইলে প্রশ্ন হইতে পারে যে আগে যজ্ঞাদি কৰ্ম্ম না আগে ব্রাহ্মণ? ব্রাহ্মণ ব্যতীত যজ্ঞাদির প্রতিষ্ঠা অসম্ভাবনীয় নহে কি? যাহা হউক, পণ্ডিতদের বিচাৰ্য্য এ সকল বড় বিষয়ের আলোচনায় আমাদের প্রয়োজন নাই । ফলতঃ বৈদিক সময় হইতেই চাতুৰ্ব্বণ্যের কথা শাস্ত্র গ্রন্থে আছে তাহার পূৰ্ব্বে কি ছিল, ইহার যখন শাস্ত্র নাই, তখন অনুমানের উপর তাহার আলোচনার আবশ্যকও আমাদের নাই । বর্ণ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ এই চাতুব্বণ্যের পার্থক্য ও বিশুদ্ধি সংরক্ষার সহিত এদেশের হিতাহিত গ্রথিত হইয়াছিল । শ্ৰেীত্ব-ধৰ্ম্ম-গৃহাদি, সূত্রগ্রন্থ ও স্মৃতি শাস্ত্রাদির মুখ্য উদ্দেশ্য তাহাই। এই চাতুৰ্ব্বর্ণ্যের মধ্যে ব্রাহ্মণই শ্রেষ্ঠ । ব্রাহ্মণের কৰ্ম্ম— তাহার আচার ব্যবহার সমস্তই শ্রেষ্ঠ । হিন্দুদের বেদ, উপনিষৎ, পুরাণ, তন্ত্র, তাবৎ শাস্ত্রেই তাহা ঘোষিত হইয়াছে। ব্রহ্মবৈবৰ্ত্তে পুরাণে লিখিত আছে, - "ব্রাহ্মণ কৰ্ম্মফলে ব্রাহ্মণ, কুল জাত হইয়া স্বধৰ্ম্ম ও সদাচারে ব্রহ্মচিন্তা করেন বলিয়াই ব্রাহ্মণ নামে অভিহিত ।” শিবপুরাণে লিখিত আছে– “ধৰ্ম্মাদি চতুব্বর্গ ব্রাহ্মণগণেই প্রতিষ্ঠিত । ব্রাহ্মণগণই যজ্ঞ, হোম এবং হবিঃ, দেবগণ ইহাতেই পরিতৃপ্ত হন। ব্রাহ্মণবর্গের মঙ্গলেই জগৎ প্রতিষ্ঠিত । তাহাদের জন্মই ব্রাহ্মণ সংজ্ঞার কারণ: সংস্কার অর্থাৎ উপনয়নে তাহাদের দ্বিজ ংজ্ঞার উৎপত্তি এবং বিদ্যাই তাহাদের বিপ্র নামের হেতু । তপস্যা, যোগ, শৌচ, সত্য ও জ্ঞানচর্চাই ব্রাহ্মণের কার্য্য । ব্রাহ্মণ মিথ্যা বলেন না, ব্রাহ্মণ প্রাণিহত্যাদি পাপ বিবৰ্জ্জিত ।” ফলতঃ ধৰ্ম্ম ব্রাহ্মণেই প্রতিষ্ঠিত, তাই ব্রাহ্মণ ভূদেব । ১. সত্ত্বাংশোহি ব্ৰাহ্মণ ইতি শ্ৰুতিঃ । BSBBB BBBB BBBBB BBDBBBS BBBBB BB BBBS BBBBB BBBB BBBBB জন্মের হীনত্ব প্রকীৰ্ত্তিত করিয়া বিশিষ্ট গুণ জন্য ব্রাহ্মণত্ব স্বীকৃত হওয়াতে সাধাবণ কৰ্ম্মবিভাগ হইতে জাতির উৎপত্তি বলা সঙ্গত হয় কি? পৃথিবীর ইতিহাসে এ সম্বন্ধে আলোচনা দ্রষ্টব্য।