পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড বেজোড়ার বিশারদ বংশ ও নন্দী বংশ তালিকা আমাদিগকে প্রদান করিয়া উৎসাহিত করিয়াছিলেন। রামকুমারের গ্রন্থাবলীর পরিচয়াদি তাহার চরিত-কথা উপলক্ষে বর্ণিত হইবে। চন্দ বংশ-কথা আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের একটী ষ্টেশনের নাম ছাতি আইন। ছাতি আইন বেজোড়া পরগণার অন্তর্গত একটি গণ্ডগ্রাম। বংশ মর্য্যাদায় এস্থানে চন্দ্র বংশীয়গণ ও জগদীশপুরের দত্তবংশীয়গণ বিশেষ সম্মানভাজন । কিন্তু চন্দবংশীয়েরাই বেজোড়া পরগণার মৌলিক অধিবাসী । ইহারা রাঢ় দেশের বিষ্ণুপুর হইতে আগমন করিয়াছিলেন। সেই নবাগত আদি পুরুষের নাম রঘুনাথ চন্দ। পূৰ্ব্বে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ সন্নিকটবৰ্ত্তী স্থানে যাইতে বেহারা-ছাতি ব্যবহার করিতেন, পূৰ্ব্বাংশে একস্থানে ইহা বলা হইয়াছে। চন্দবংশীয়গণই তদঞ্চলে ছাতি ব্যবহারের "আইন" (রীতি) প্রচলন করেন, বলিয়া তাহাদের বাসস্থান “ছাতি-আইন” নাম প্রাপ্ত হয়। চন্দ বংশীয়রা নবাবি আমলে তদঞ্চলের চৌধুরাই প্রাপ্ত হন। জন সংখ্যায় এই বংশ কখনই অতি বৃহৎ ছিল না। বৰ্ত্তমানে তিন পরিবার মাত্র ছাতি আইনে বাস করিতেছেন। চন্দ বংশে পূৰ্ব্বে বুড়ন চৌধুরী নামে এক প্রভাবশালী খ্যাত নামা পুরুষের উদ্ভব হয়, ইনি একটা দীঘী খনন করাইয়াছিলেন, এই দীঘীর জলভাগের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০০ হস্ত পরিমিত, উহা এক্ষণে জীর্ণদশা প্রাপ্ত। শ্রীহট্টের জনৈক নবাব বুড়ন চৌধুরীকে বিশেষ অনুগ্রহ করিতেন। কাৰ্য্য অবসানে উক্ত নবাব শ্রীহট্ট হইতে চলিয়া যাইবার কালে ইহাকে দেখিয়া যাইতে ইচ্ছা করিয়া, একটি আরদালি পাঠাইয়াছিলেন। আরদালি আসিয়া যখন তাহাকে এই সংবাদ দিল, বুড়ন চৌধুরী তখন পূৰ্ব্বোক্ত দীঘী কাটাইতেছিলেন ও একটী চেয়ারে বসিয়া তাম্রকুট সেবন করিতেছিলেন। তদবস্থায় বলিয়া উঠিলেন—“জোয়ারের জল আসিবার কালে মাথার উপর দিয়া আসে, যাওয়ার কালে কেহ গ্রাহ্যও করে না।" তিনি আর শ্রীহট্টে গেলেন না; আরদালি ক্ষুণ্ণ মনে চলিয়া গেল । আমাদের ছাতি আইনের প্রাপ্ত বিবরণীতে লিখিত আছে যে, এক বৎসর পরে উক্ত কৰ্ম্মচারী পুনঃ নবাবি প্রাপ্তে শ্রীহট্টে আগমন করিয়াছিলেন এবং বুড়ন চৌধুরীর এবম্বিধ ব্যবহারের শাস্তিস্বরূপ ছাতি আইনের অদূরবর্তী নওয়াগার নিকটবৰ্ত্তী একটি উচ্চ স্থানে উত্তপ্ত লৌহ শলাকাদ্বারা তাহাকে হত্যা করাইয়াছিলেন, ঐ হত্যাস্থান তদবধি “বুড়নটীলা” নামে অভিহিত হয়। স্বনামখ্যাত পরহিতকামী উকীল মাননীয় শ্রীযুক্ত কামিনীকুমার চন্দ এম,এ, বি,এল মহাশয় এই চন্দবংশে উদ্ভূত হইয়াছেন । বংশ প্ৰবৰ্ত্তক রঘুরাম চন্দ হইতে এখন পর্যন্ত এ বংশে ২৩ পুরুষ চলিতেছে। ছাতি আইনের ভট্টাচাৰ্য্য বংশ চন্দদের পুরোহিত। এ বংশে রূদ্ৰদেব মুনিগোসাই নামে এক সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন, ৪র্থ ভাগে ইহার কথা বলা যাইবে । দেব বং বেজোড়ায় দেবোপাধি রতিরাম-বংশীয়দের বাস। এই বংশীয়েরা পূৰ্ব্বে সরাইলবাসী ছিলেন । বলা আবশ্যক যে সরাইল পূৰ্ব্বে শ্রীহট্টেরই অন্তর্গত ছিল ; রতিরামের পিতামহ গোবিন্দ রাম রাঢ় দেশের লোক ছিলেন বলিয়া তদ্বংশে কথিত হয়। রতিরাম পারস্য ও সংস্কৃতে পণ্ডিত ছিলেন। মুর্শিদাবাদের দেওয়ান হইয়া তিনি রায় উপাধিতে ভূষিত হন ও সরাইলে জায়গির লাভে তথায় গমন করেন। পূৰ্ব্বে ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তিদের গৃহ-সন্নিকটে দিয়া দোলারোহণে কেহই যাইতে পারিত না, সৰ্ব্বত্রই এ রীতি ছিল; রতিরামের বাড়ীব ধার দিয়াও কেহ ঐরূপে যাইত না। কিন্তু রতিরামের জামাতা, শ্বশুর বাড়ীতে পূৰ্ব্বে সংবাদ না দিয়াই ঐ