পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : ব্রাহ্মণ বংশ বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৫৭ পরগণা-দু-হালিয়া দেওয়ান বংশ ইটার বাৎস্য গোত্রীয় রাজা সুবিদ নারায়ণের বংশোদ্ভব বাসুদেব দু-হালিয়া নামক স্থানে আসিয়া বাটী নিৰ্ম্মাণ করিয়া এই স্থানে অবস্থিতি করেন বলিয়া কথিত আছে। তাহার মহেশ্বর নামে এক পুত্র হয়, মহেশ্বর অতি বুদ্ধিমান, সাহসী ও পরাক্রমশালী ব্যক্তি ছিলেন। মহেশ্বর ঢাকার নবাবের সহানুভূতিতে দুহালিয়া, চামতলা ও বড়আখিয়া নামক পরগণাত্রয়ের অবাধ্য অধিকারীকে দমন করিবার ভার গ্রহণ করেন। ঐ স্থান তখন ধনুরাজা নামক জনৈক খাসিয়া দলপতির অধিকৃত ছিল। মহেশ্বর অনেক সৈন্য সংগ্রহক্রমে উক্ত ধনুরাজকে পরাস্ত হইলে মহেশ্বর তাহাকে "মুখদেন” পাহাড়ে তাড়াইয়া দেন। পলায়ন কালে মুখদেন পৰ্ব্বত-নিঃসৃত একটি খরস্রোতা নদীতে ধনুরাজার বহুতর লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয়; এই ঘটনা হইতে উক্ত মহেশ্বরের চেষ্টায় এই পরগণাত্রয় অধিকৃত হইলে, তিনি দেওয়ান উপাধি প্রাপ্ত হইয়া এই স্থানে থাকেন ও রাজস্ব সংগ্রহের ভার প্রাপ্ত হন; এবং পুরস্কার স্বরূপ ঢাকার নবাব হইতে সেই স্থানে চারিশত হাল ভূমি নিষ্কর প্রাপ্ত হন। মহেশ্বর দীর্ঘকাল এই সম্মান ভোগ করিয়া, বৃদ্ধকালে একপুত্র লাভ করেন। এই পুত্রের এবং তাহার পুত্রের নাম জানা যায় নাই। দেওয়ান ব্ৰজনাথ, দুর্গাচরণ ও তিলক চাদ নামে মহেশ্বরের তিন প্রপৌত্র ছিলেন; ইংরেজ আমলের প্রথম সময়ে ইহারা জীবিত ছিলেন। ব্ৰজনাথের নামে ১নং তালুক বন্দোবস্ত হয়, দুর্গাচরণ ও তিলক চাদের নামে তত্ৰত্য “৭নং দুর্গাতিলাই তালুক” বন্দোবস্ত হইয়াছিল। এই বংশে পরবর্তী সময়েও অনেক ধীশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তির উদ্ভব হইয়াছিল। স্বগীয় চন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তন্মধ্যে একজন, ইনি বিনয়ী, বিদ্বান এবং ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। সৰ্ব্বসাধারণের হিতসাধনে তদীয় শক্তি সতত নিয়োজিত হইত; আদ্যাপি লোকে তাহার গুণকীৰ্ত্তন করিয়া থাকে। দু-হালিয়ার শ্রীযুক্ত বিপিন বিহারী চক্রবর্তী মহাশয় হইতে এই বিবরণী প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। পরগণা-নৈগাঙ্গ যে সময়ে নৈগাঙ্গ পরগণার মোহাম্মদ হেলিম নামে জনৈক মোসলমান সদাগর আসিয়া বাস করেন;৬ তৎকালে নারায়ণ শৰ্ম্মা নামে এক ব্রাহ্মণ এ স্থানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। নারায়ণ এই স্থানটি বাসোপযোগী মনে করিয়া আবাস বাটী নিৰ্ম্মাণ করেন, তাহার নামে তখন ঐ স্থান “নারায়নপুর" বলিয়া খ্যাত হয়। কালক্রমে নারায়নের বংশধরবর্গ তথা হইতে উঠিয়া নগদীপুর গ্রামবাসী হন, কিন্তু সেই স্থানেও তাহারা স্থায়ী হইতে পারেন নাই; কামার খালির তীরবর্তী কামারখাল গ্রামে গিয়া ইদানীং তাহারা বাস করিতেছেন। এই বংশীয় কৃষ্ণজীবন ও হরিশ্চন্দ্র পুরকায়স্থের নামে নৈগাঙ্গের ৫নং ও ৬নং তালুক বন্দোবস্ত হয়।৭ কামার খালের চৌধুরী বংশীয়গণ পুরকায়স্থ বংশের একটি শাখা; ইহারা বাণিয়াচঙ্গের দেওয়ানের অধীনে চৌধুরী আখ্যা প্রাপ্ত হন। এই চৌধুরী বংশে শ্রীযুক্ত উপেন্দ্রচন্দ্র চৌধুরী বৰ্ত্তমান আছেন। নৈগাঙ্গের ৭নং তালুকটি পুরকায়স্থ বংশের পুরোহিত চক্রবর্তী বংশের এক ব্যক্তির নামে বন্দোবস্ত হইয়াছিল। ৬. পরবর্তী ৩য় অধ্যায়ে ইহাদের কথা লিখিত হইবে। নৈগাঙ্গের এই উভয় বিবরণ শ্ৰীযুক্ত জগন্নাথ দেব বি, এ মহাশয় পাঠাইয়া উপকৃত করিয়াছেন। ৭. ১নং ২নং ৩নং ও ৪নং তালুক হেলিম সদাগরের নামে বন্দোবস্ত হয় ।