পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড পুণ্য কথার সহিত এই তৃতীয় ভাগ আরম্ভ করিলাম। সাম্প্রদায়িক বিপ্রবর্গ মিথিলাদেশ অনেকগুণে গৌরবান্বিত। যে দেশ রাজর্ষি জনকের নির্বিকল্প সাধনক্ষেত্র, যে দেশে মহর্ষি গৌতম যাজ্ঞবল্ক্য প্রভৃতি উদ্ভূত হইয়াছিলেন, যে দেশ গাগী, সীতা প্রভৃতি সাধ্বিগণের পদরেণুতে পবিত্রীকৃত, সে দেশ অনেক গুণে গৌরবান্বিত। এই মিথিলার সহিত বাঙ্গালী জাতির সম্বন্ধ কম নহে। মিথিলার কবি বিদ্যাপতির কবিতা বঙ্গভাষার এক অমূল্য সম্পত্তি । মিথিলাপতিগণও “পঞ্চ গৌড়েশ্বর" উপাধি ধারণ করিতেন; এবং তাহাদের রাজ্যে বাঙ্গালার লক্ষ্মণাব্দ চলিত। কিন্তু মিথিলার সহিত শ্রীহট্টের সম্বন্ধ ঘনিষ্ঠতর। যখন বঙ্গদেশে কান্যকুজীর ব্রাহ্মণগণের আগমন ঘটে নাই, তাহার প্রায় নবতি বর্ষ পূৰ্ব্বে ত্রৈপুর নৃপতি আদি ধৰ্ম্মপার আহবানে শ্রীহট্টে বৎস, বাৎস্য, ভরদ্বাজ, কৃষ্ণাত্রেয় ও পরাশর ও পঞ্চগোত্রীয় পাচজন তপস্বীর শুভাগমন হয় বলিয়া কথিত আছে। ইহারা এক বৎসর এদেশে অবস্থানপূৰ্ব্বক পুনৰ্ব্বার স্বদেশে গমন করিয়াছিলেন, এবং স্ত্রীপুত্রাদিসহ প্রত্যাগমন কালে কাত্যায়ন, কাশ্যপ, মৌদগুল্য, স্বর্ণকৌশিক ও গৌতম, এই পঞ্চগোত্রীয় পঞ্চব্ৰাহ্মণ তাহাদের উপরোধ-বাধ্য হইয়া এদেশে আসিয়া বাস করেন। এই দশ গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণই শ্রীহট্টে সাম্প্রদায়িক বিপ্র নামে খ্যাত ॥১ সাম্প্রদায়িক ব্রাহ্মণগণের আগমনের পরেও বহুতর বিপ্ৰ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন স্থান হইতে আগমন করিয়াছিলেন; তাহাদের মধ্যে অনেকেই কালে সাম্প্রদায়িক শ্রেণীতে ভুক্ত হইয়া সাম্প্রদায়িকবৎ সম্মান ভাজন হইয়াছেন। এই সাম্প্রদায়িক দশ গোত্রীয়ের আগমনের পরেও মিথিলা হইতে কেহ কেহ আসিয়াছিলেন । কোন কোন বংশের পূৰ্ব্ব পুরুষ কান্যকুজ হইতেও আসিয়াছিলেন বলিয়া জানা যায়। পরবর্তীকালে রাঢ় ও বরেন্দ্র ভূমি হইতেও কেহ কেহ শ্রীহট্টে আসিয়াছিলেন; ও কেহ কেহ যে সাম্প্রদায়িক সমাজে গা-ঢাকা দিবার চেষ্টায় কৃতকাৰ্য বা অকৃতকার্য হইয়াছিলেন, তাহাই তাহার উদাহরণ। শ্ৰীমন্মধুকর মিশ্র২ বংশের একশাখা সাম্প্রদায়িক শ্রেণীতে অন্তর্গত হইয়া পড়িয়াছেন এবং ঢাকা দক্ষিণের অপর শাখা মিশ্র বংশ বলিয়াই সম্মানিত । বরগঙ্গা আদিদেব উত্তর শ্রীহট্ট সবডিভিশনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বুরুঙ্গা পরগণা। এই পরগণায় ঘৃত কৌশিক গোত্রীয় পাশ্চাত্যবৈদিক বিপ্রবর্গের আদি বাস; সেই আদি বসতিকারক তদ্বংশে আদিদেব নামে খ্যাত । আদিদেব মিথিলাগত শ্রীহট্টের সাম্প্রদায়িক বিপ্রবর্গের কিঞ্চিৎ পরেই কান্যকুজ হইতে সমাগত হইয়াছিলেন বলিয়া তদ্বংশীয়গণ কীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন। তিনি তীর্থ পৰ্য্যটনে আসিয়াছিলেন এবং চন্দ্রনাথ দর্শনান্তর পত্নীর সহিত “কামরূপ গমন” মানসেত বরবক্র পার হইয়া এক বৃক্ষতলে শ্রান্তিদূর করে উপবেশন করেন। পথশ্রমে তিনি অত্যন্ত কাতর ও ক্লান্ত ১. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ১ম খণ্ড ৪র্থ ও ৫ম অধ্যায়ে বিস্তারিত বিবরণ দ্রষ্টব্য। ২. প্রেমবিলাসে লিখিত আছে যে, বিশুদ্ধ মিশ্র নামে এক মহাত্মা ছিলেন,— "তার পুত্ৰ মধুমিশ্র শ্রীহট্টে কৈল ধাম।" ৩. কামাখ্যা পীঠ খ্ৰীষ্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে প্রকাশিত হন, কিন্তু স্থান মাহাত্মা পূৰ্ব্বাবধি পবিজ্ঞাত ছিল; প্রাচীন শাস্ত্র গ্রন্থাদিতে এই তীর্থ প্রসঙ্গ আছে ।