পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : মধুকর বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪৫ হইয়াছিলেন, এবং অপরিচিত বিদেশে বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছিলেন। দেহের অবসন্নতায় তাহার মনে হইয়াছিল, তিনি ততদূরে যাইতে সমর্থ হইবেন না। পক্ষান্তরে বহুদূরে ভাগীরথী রহিয়াছেন, যদি শেষদিন সমুপস্থিত হয়, গঙ্গাদর্শনও ঘটিবে না। এইরূপ চিন্তায় আদিদেব ক্লিষ্ট হইলে মা কামাখ্য আর স্থির থাকিতে পারিলেন না, বিপন্ন সন্তানের প্রতি করুণা হইল, করুণাময়ী তৎপ্রতি সেই স্থানে অবস্থানেরই প্রত্যাদেশ করিলেন; সেই স্থানে গঙ্গাদর্শনেই তাহার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে বর দিলেন । তাহাই হইল, দেবীর বরে ভাবুক ভক্তের নেত্রপথে গঙ্গার রূপপ্রভা প্রতিভাত হইল— বরবক্র— নীরে তাহার গঙ্গা দর্শন ঘটিল! তদবধিই এইস্থান বরগঙ্গা ইতি খ্যাতি লাভ করে। বরগঙ্গা নামের অন্য একটি কারণও আমরা পরে প্রদর্শন করিব । , এই আদিদেবের ষষ্ঠ পুরুষে হিরণ্যগৰ্ভ জন্মগ্রহণ করেন, তাহার এই সুলক্ষণা কন্যা ছিল, উহার নাম চীদেবী। বৎস গোত্রজ পাশ্চাত্য বৈদিক মধুকর মিশ্রের সহিত এই চণ্ডীদেবীর বিবাহ হইয়াছিল । মধুকর মিশ্র মধুকর মিশ্র কে ছিলেন? মধুকর মিশ্রকে কেহ কেহ কান্যকুজ্বাগত বলিয়া লিখিয়াছেন। কেহ বলেন, তিনি পূর্বোক্ত পঞ্চ গোত্ৰীয়ের একতম বৎস গোত্রীয় আনন্দের সন্তান আবার আমাদিগকে কেহ লিখিয়া জানাইয়াছেন যে, মধুকর মিথিলাগত এবং তিনি বিদ্যাপতির সময়ে আগমন করেন। এই ত্ৰিবিধ উক্তির মূলে কোন প্রবল প্রমাণই প্রদর্শিত হয় নাই। কেহ কেহ মধুকর মিশ্রকে যাতপুরাগত দাক্ষিণাত্য বৈদিক বলিয়া লিখিয়াছেন। কিন্তু মধুকর বংশীয়গণ একবাক্য আপনাদিগকে পাশ্চাত্য বৈদিক বলেন (৫ ফলতঃ মধুকর মিশ্র সচরাচর মিথিলাগত বলিয়াই পরিকথিত হন । মধুকরের বরগঙ্গা বাস যখন বৎস গোত্রীয় মধুকরমিশ্র তীর্থ পৰ্য্যটনোপলক্ষে নানাস্থান ভ্রমণান্তর বরবক্র-তীরে বরগঙ্গায় উপস্থিত হন, কথিত আছে তৎকালে তিনি বাতব্যাধিতে পীড়িত হইয়া কিছুদিন এস্থানে অবস্থিতি করেন। এই সময়ে তত্ৰত্য অধিবাসী হিরণ্যগর্ভের চণ্ডী নামী কন্যা অবিবাহিতা ৪. বুরুঙ্গার বামরত্ন ভট্টাচার্য কৃত "শ্রীচৈতন্যরত্নাবলী" মতে তিনি কান্যকুজাগত। বৈদিককুলমঞ্জুরীও কুলপঞ্জিকামতে তদীয় নবম পুরুষ উর্ধ্বে রমানাথ জাত হন, তিনি কান্যকুজবাসী ছিলেন । মধুকর রমানাথের বংশ জাত বলিয়া কনোজ ব্রাহ্মণ হইতেছেন। মধুকর মিশ্রের বুরুঙ্গা প্রভৃতি স্থানবাসী পরবৰ্ত্তিগণ স্বগুণে সাম্প্রদায়িক শ্রেণী ভুক্ত হন, তদৃষ্টে বোধ হয় ইটাবাসী কেহ কেহ ইহাদিগকে মিথিলাগত আনন্দের সন্তান বলিয়া আমাদিগকে লিখিয়া থাকিবেন। বস্তুতঃ বঙ্গীয় কুলগ্রন্থাদি দৃষ্টি করিলেন উপেন্দ্র পিতা মধুকরকে আনন্দ-সন্তান বলা যায় না। মধুকর বিদ্যাপতির সময়েও এদেশে আসেন নাই, তিনি বিদ্যাপতির পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী কালের লোক, সমসাময়িক নহেন। সচরাচর তিনি মিথিলাগত বলিয়া উক্ত হইলেও নিশ্চিত বলা যাইতে পারে না যে তিনি কোথা হইতে আসিয়াছিলেন । ৫. মধুকর মিশ্র পাশ্চাত্য না দাক্ষিণাত্য? মধুকর পাশ্চাত্য কি দাক্ষিণাত্য বৈদিক, তদ্বিষয়ে যখন কোন আন্দোলন আলোচনা ছিলনা, তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রীহট্টাগমনের প্রমাণ সংগ্রহ কল্পে বৃত হইয়া আমরা একখানা হস্তলিখিত "শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্যেদয়াবলী" গ্রন্থ প্রাপ্ত হই। তাহাতে মধুকর মিশ্রকে দক্ষিণাত্য বৈদিক বলিয়া লিখিত ছিল । ইহার প্রতিলিপি আমরা শ্রীহট্টের উকীল শ্রীযুক্ত চৈতন্যচরণ দাস মহাশয়কে ও দ্বিতীয় প্রতিলিপি প্রাচ্যবিদ্যা মহার্ণব শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয়কে দিয়াছিলাম ।