পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭১ চলিলেন। ঠাকুর দুৰ্ল্লভ বললেন, "এত রাত্রিতে একা যাবে, চল আমিও কিছুদূর সঙ্গে যাই।” উভয়ে গল্প করিতে করিতে শেষটা ঠাকুর বাণীর বাড়ীতেই উপস্থিত, তখন ঠাকুর বাণী বলিলেন, “তা কি হয়, তুমি এতদুর একা যাবে? চল আমিও খানিকটা যাই।” এই “খানিকটা” যাইতে যাইতে উভয়ে আবার আলমপুর উপস্থিত। এইরূপ সেই রাত্রিতেই না কি উভয়ে সাতবার যাতায়াত করিয়া রাত্রিটি প্রভাত করেন! কি প্রকারে ইহা সম্ভব হইতে পারে? আমরা প্রকৃত মানুষ কিরূপে বুঝিব? শ্ৰীশ্ৰীভবানী মাতার বাড়ীতে স্বগীয় হরানন্দস্বামী গল্প করিয়াছিলেন, তিনি নানাতীর্থ ভ্রমণ করিতে করিতে যখন মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রে সিদ্ধিলাভ করিলেন এবং ভবানীপুরে অবস্থিতি করিবার জন্য আদেশ পাইলেন, তখন এক রাত্রিতেই ভবানীপুরে অবস্থিতি করিবার জন্য আদেশ পাইলেন, তখন এক রাত্রিতেই ভবানীপুরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পরে লোকের সঙ্গে সঙ্গে কথায় কথায় জানিতে পারিলেন, যে স্থান হইতে একরাত্রিতে ভবানীপুরে আসিয়াছিলেন, খুব দ্রুত আসিলেও ভবানীপুর হইতে সেস্থানে তিনদিনের কমে যাওয়া যায় না! ঠাকুর দুৰ্ম্মভের অনেক গল্প আছে। দুৰ্লভের আখড়ায় এখনও অতিথি হইয়া থাকে।" নরসিংহ লাড়িয়াল শ্রীপতি নামক নাডুলী গ্রামী একব্যক্তি শ্রীহট্টের লাউড়াধিপতি সূৰ্য্যসিংহের মন্ত্রী হইয়া শ্রীহট্টে আগমন করেন, তাহার পরবর্তী বংশধরবর্গ তদবধি লাউড় বাসী হন; শ্রীপতির বুদ্ধপ্রপৌত্র নরসিংহ প্রসিদ্ধ নামা ব্যক্তি । তিনি বিদ্যা শিক্ষার্থ রামকেলিবাসী জটাধর সৰ্ব্বাধিকারী বাটিকায় গমন করিয়াছিলেন। নৃসিংহের পিতা পিতামাতাদি শ্রীহট্টবাসী ছিলেন বলিয়া কুলীন সমাজে সম্প্রদানাদির অসুবিধা ঘটায়, তিনি শান্তিপুরে একবাটী প্রস্তুত করিয়া ছিলেন এবং শ্রীহট্ট হইতে কখন কখন তথায় গিয়া বাস করিতেন। তাহার পূর্বপুরুষ আরু ওঝা নাডুলী গ্রামী ছিলেন; সেই জন্য নরসিংহ শান্তিপুরে “নাড়িয়াল” নামে খ্যাত হন ৬৫ শান্তিপুরে তৎকালে ব্রাহ্মণবাসী গ্রামবাসী শুকদেব সমাগম হয়। নরসিংহেরও নিমন্ত্রণ হইয়াছিল। তাহার ভোজনের সময় উপস্থিত হইতে কিঞ্চিৎ বিলম্ব ঘটিয়াছিল, কিন্তু সমাগতেরা তাহার অপেক্ষা না করিয়াই ভোজনে উপবেশন করেন। কিঞ্চিৎ পরে নরসিংহ উপস্থিত হইয়া ব্যাপার দৃষ্টি আপনাকে অতি অপমানিত জ্ঞান করেন এবং তাদৃশ বিসদৃশ ব্যাপারের কারণ জিজ্ঞাসিলে সকলে প্রত্যুত্তর করেন যে বহুকাল যাবৎ উচ্চ ঘরে তাহদের সম্প্রদানাদি না থাকায় তাহার হীনত্ব ঘটিয়াছে। কাজেই তাহার জন্য অপেক্ষার আবশ্যক অনুভূত হয় নাই। তাহারা ইহাও বলিলেন যে কুলীন—শ্রেষ্ঠ মধুমৈত্রকে তিনি যদি কন্যাদান করিতে পারেন; তবেই তিনি পূৰ্ব্বানুরূপ পূজিত হইবেন।৬৬ ঐ সময়ে দৈবক্রমে দিনাজপুরের রাজা গণেশের সহিত তাহার দেখা হয়। গণেশ তাহার ৬৫. “মধ্যে মধ্যে শান্তিপুরে করে অবস্থিতি । নরসিংহ নাড়িয়াল নাড় লীও কয়। নাড়িয়াল, নাউড়িয়াল, নাড়ুলী একই অর্থ হয়।" —প্রেম বিলাস । ৬৬. “সবে বলে বড় ঘরে নাহি কন্যা দান । সে কারণে তোমাকে করি হেয় জ্ঞান৷ মধুমৈত্রে যদি কন্যা সমৰ্পিত পার। আমরা মিলিয়া পূজা করিব তোমার৷—ঐ