পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৭ ৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে— “কবিবল্লভ ও বংশীদাস দ্বিজ নামক দুই জন কবি নারায়ণ দেবের রচিত পদ্মাপুরাণ গ্রন্থ মধ্যে এত বহুল পরিমাণে নিজ নিজ রচনা অন্তর্নিবিষ্ট করিয়া দিয়াছেন যে, প্রায় উহা একখানি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রূপে পরিগণিত হইয়াছে।” নারায়ণ দেবের পদ্মাপুরাণে কবিবল্লভ ও বংশীদাস উভয় নামাত্মক ভণিতার মধ্যে বংশীদাসকে যেমন এক ভিন্ন কবি বলা হয়, কবিবল্লভের সম্বন্ধে তদ্রুপ না হইয়া অন্যরূপ ব্যবস্থা সমীচীন দেখা যায় না। ইহাদের পরস্পরের জীবিত কালও প্রায় একই বলিয়া জানা যায়,৮৪ সুতরাং ইহার পরস্পর বন্ধুতায় আবদ্ধ থাকার জনশ্রুতি প্রকৃত বিবেচনা করিবার কারণ আছে શ્વ ક્ર এবং তাহারা যে একদেশী ছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই । “সৌরভ" পত্রে সুহৃদ্বয় শ্রীযুক্ত বিরজা কান্ত ঘোষ মহাশয় নারায়ণ দেবও পদ্মাপুরাণ সম্বন্ধে গবেষণামূলক একাধিক প্রবন্ধ লিখিয়াছেন, তাহাতেও আমার মত সমর্থিত হইয়াছে।৮৫ নিধিপতি প্রাচীন ইটা রাজ্যের অধিস্বামী, বাৎস গোত্রীয় ব্রাহ্মণ নিধিপতির বিস্তৃত কাহিনী শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ১ম খণ্ড ৫ম অধ্যায় বর্ণিত হইয়াছে বলিয়া এস্থলে পুনরুক্ত হইল না। নিমাই পণ্ডিত (নিত্যানন্দ) ইতিপূৰ্ব্বে আমরা গঙ্গারাম ওরফে বঞ্চিত ঘোষের বিবরণ বর্ণন করিয়াছি, ঘোষ বঞ্চিতের ৬ষ্ঠ পুরুষে ১৭০০ শকাব্দে নিমাই পণ্ডিতের জন্ম হয়, ইহার পিতার নাম আনন্দির্চাদ ঘোষ। আনন্দিচাদের পুত্র নিত্যানন্দ, নিমাই পণ্ডিত এই উপনামে পরিচিত হইয়াছিলেন। ৮৪. ইতিপূৰ্ব্বে বংশীদাস নামীয় একটি তালুক থাকা উল্লেখিত হইয়াছে। বংশীদাস স্বীয় পদ্মাপুরাণে যে তারিখ লিখিয়াছেন তাহা এই— “জরধির বামেতে ভুবন মাঝে দ্বার (১৪২৭) শ্ৰকে লচে দ্বিজ বংশী পুরাণ পদ্মার॥" সুতরাং ৩৩৭ বৎসর পূৰ্ব্বে যে গ্রন্থ রচিত হয়, তাহার সন্দেহ নাই। এদিকে লর্ড কর্ণওয়ালিসের সময়ই তালুকাদির নাম হয়। ইহাতে কেহ কেহ বংশীকে এই সময়কার লোক মনে করিয়া ভ্রম পতিত হইয়াছেন। ময়মনসিংহের হাজারদি পরগণান্তর্গত পাতুয়ারী গ্রামে বংশীয় নামে যে তালুক আছে, উহা পরবৰ্ত্তিকালে, ময়মনসিংহগামী কোন উত্তরাধিকারী কর্তৃক তাহার নামে হইয়া থাকিবে । বংশের পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত শ্রেষ্ঠ পুরুষের নামে পরবর্তী ব্যক্তি কর্তৃক এইরূপ তালুকের নাম নির্দেশ করার বহু উদাহরণ আছে, পাঠক তাহা বহু স্থানে পাইয়াছেন; এস্থলেও অদ্রুপই হইয়াছে। বংশীদাসের উল্লেখিত সময়ের সহিত কবিবল্লভের ভ্রাতৃবংশের (ভট্টশ্রীর ভট্টাচাৰ্য্য বংশ) পুরুষ সংখ্যায় তুলনা করিলে উভয়ের সময়ের মধ্যে বড় অনৈক্য লক্ষিত হইবে না। প্রায় দশ বৎসর পূৰ্ব্বে একখানা নারায়ণী পদ্মাপুরাণ প্রাপ্ত হইয়াছিলাম ও তৎদৃষ্টে নব্য ভারতে একটা প্রবন্ধও লিখিয়াছিলাম উহাতেও কবিবল্লভের ও বংশীদাসের নাম ছিল মনে হয়! ঐ পুঁথিতে কোন তারিখ ছিল না, পুঁথির অবস্থা দৃষ্টি অনুমানতঃ তিনশত বৎসরের প্রাচীন মনে করিয়া লিখিয়ছিলাম, কিন্তু তত প্রাচীন না হইতে পারে । ৮৫. কামরূপ অঞ্চলে এক নারায়ণ দেবের অসমীয় পুথি দৃষ্ট হয়, তাহ পদ্মাপুরাণেরই প্রায় অবিকল অনুবাদ। ঐ অঞ্চলে প্রবাদ যে নারায়ণ দেব দরঙ্গ রাজগণের সভাসদ ছিলেন। তাহা হইলে তিনি সপ্তদশ শতাব্দীর লোক হন। আমাদের নারায়ণ দেব ও কামরূপের নারায়ণ দেবে স্পষ্টতঃ অভিন্নত্ব দেখিয়া অধ্যাপক শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ মহাশয় অনুমান করেন যে সম্ভবতঃ নারায়ণ দেব রোব গ্রামে উপনিবিষ্ট হইবার পূৰ্ব্বে এক সময়ে আসাম অঞ্চলে গিয়া রাজসভায় সম্মান লাভ করিয়া আসিয়াছিলেন।