পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮১ পুস্তক ছিল। বর্ণ শিক্ষাদানের উপদেশ (শিক্ষকদের) নামক শিশুদের উপযোগী এক পুস্তিকা হইয়া গিয়াছিল। . তিনি শেষাবস্থায় বহুমূত্র রোগে পীড়িত হইয়া পড়িয়াছিলেন, এই সময়ে শিলং সেক্রেটারিয়েটে তিনি একটি কৰ্ম্ম প্রাপ্ত হইয়াছিলেন কিন্তু রোগের তাড়নায় শীঘ্রই কাৰ্য্যত্যাগ করিয়া পুনঃ শ্রীহট্টে প্রত্যাগমন করিতে বাধ্য হন, সেই রোগেই তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হন। শ্রীহট্টের ঘাটুগান প্রথমে উপাদেয় ছিল, দুঃখের বিষয় পরে ইহা বিকৃত হইয়া পড়ে; শ্রীহট্ট উহারা “রাজভোগে” আহার পাইত, রাজ কুমারের ন্যায় সুবেশ ধরিয়া থাকিত, ইহাদিগকে নৰ্ত্তকী বেশে আসরে আসিয়া নাচিতে ও রাধা কৃষ্ণ লীলাত্ম্যক সঙ্গীত গাইতে হইত। প্যারীবাবুর চক্ষে ইহা বড়ই বিসদৃশ বোধ হইত, এই জন্য তিনি উদ্যোগী হইয়া, ধৰ্ম্মপুর নিবাসী তদীয় বন্ধু কৃষ্ণচরণ দাসের সহায়তায়, এই কুপ্রথাকে শহর হইতে চির বিদায় দিয়াছিলেন। ইহাতে সামান্য বেগ পাইতে হয় নাই, বহু ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাহাদিগকে ঘোরতর যুদ্ধ করিতে হইয়াছিল। শহরে সৰ্ব্বশেষ ঘাটু নাচ হওয়ার পরদিন ছোকরাটিকে একটি গর্দভের উপর উলটা চড়াইয়া শহর হইতে বিদায় দেওয়া হয়; বলা বাহুল্য যে সেই কুপ্রথার প্রতি ঘৃণা প্রকাশই এই অনুষ্ঠান করা হয়। প্যারীচরণ দাস এই প্যারীচরণ ব্রাহ্মণ ছিলেন; নিবাস শ্রীহট্টের পুটিজুরী । নামের পরে তিনি “দাস” খ্যাতি ব্যবহার করিতেন। তাহার জীবন যে কিরূপ দৈন্যময় হইয়াছিল, ইহাতেই তাহা বুঝা যায়। শ্ৰীমহাপ্রভুর ভক্তগণের মধ্যে অনেক ব্রাহ্মণ সন্তানকে দাস উপাধিতে আত্মপরিচয় প্রদান করিতে দেখা যায়, তাহারা আপনাকে নিতান্ত হীন মনে করিতেন; প্যারীচরণের দাসোপাধি ধারণ সেই ভাব জাত । করেন এবং চির কৌমাৰ্য্য ব্রত পালন করেন। তাহার অভিপ্রায় অবগত তদীয় কোন কোন বিফল হইয়াছিল। যাহার আকর্ষণে তিনি গৃহত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন, সামান্য অস্থায়ী কল্পিত সুখের আশায় তিনি তাহা পরিত্যাগ প্রয়াসী হন নাই। তাহার জ্ঞান ও বৈরাগ্য অতুল্য ছিল, ভক্তি অসাধারণ ছিল। ভগবৎ মহিমা বর্ণন করিতে তাহার মুখে বড়ই মধুর শুনাইত। তিনি বৃন্দাবনে রাধাকুণ্ডতীরে বাস করিতেন। নিৰ্জ্জন রাধাকুণ্ডতীর ভজনের পক্ষে অতি উপযোগী, সেই স্থানেই বিগত ১৩০৬ সালে তিনি দেহরক্ষা করেন। প্রদ্যুম্ন মিশ্র প্রদুম মিশ্র শ্রীহট্টের ঢাকা দক্ষিণ নিবাসী ছিলেন, ইহার পিতার নাম কংসারি মিশ্র, ইনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জ্যৈষ্ঠতাত পুত্র। প্রদ্যুম্ন মিশ্র একজন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন; “শূদ্রাহ্নিকাচার" নামক গ্রন্থের রচিয়তা এই প্ৰদ্যুম্ন মিশ্র। শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু যখন শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণে আগমন করিয়া ছিলেন, তখন তাহার সহিত ইহার সম্মিলন ঘটে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাক্য-সুধা শ্রবণে তাহার বৈরাগ্য জন্মে, এবং তিনি সংসারধৰ্ম্মে জলাঞ্জলি দিয়া সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। ঐ সময়ে পূৰ্ব্ববঙ্গের বহুব্যক্তি নীলাচলে গিয়াছিলেন, চৈতন্য ভাগবতে লিখিত আছেঃ– শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-চতুর্থ ভাগ)-৬