পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৯ তাপস চলিয়া গেলে পথিকত্ৰয় তৎপ্রদর্শিত পথে প্রফুল্লচিত্তে প্রস্থানকরতঃ অল্পদূরে গিয়াই পরিচিত পন্থা প্রাপ্ত হইয়া দিনারপুরে পৌছিলেন। তাহারা আপনাদের গুরু জয়গোবিন্দকে ঋষিদত্ত ফল প্রদানান্তর তৎকথিত কথাগুলি অবিকল বলিলেন। শুনিয়া জয়গোবিন্দ গয়া গমনের সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিলেন। এই জটাবন্ধলধারী ঋষি যে ঠাকুর বাণী ব্যতীত আর কেহ নহেন, তাহা সকলেই বুঝিল । জয়গোবিন্দ আপন মনে গয়া-গমনের যে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন, তাহা সেই সময়ই তাহার মুখে প্রকাশ পাইল। সকলেই বুঝিল যে তপঃ প্রভাবে বাণী এখনও জীবিত রহিয়াছেন । ইহাও বুঝিল যে, সিদ্ধ মহাপুরুষদের কিছুই অগোচর থাকিবার নহে। স্ববংশীয়বর্গকে আশ্বস্ত করাই এই আত্মপ্রকাশের হেতু-গয়ার পিণ্ডদান নিবারণের কথা একটা উপলক্ষ্য মাত্র । ঠাকুরবাণীর রোপিত একটি তেঁতুলবৃক্ষ দিনারপুরে আছে, বৃক্ষটি অতি প্রকাণ্ড ও “সিদ্ধ তেঁতুল" নামে খ্যাত। বৃক্ষের তলা ইষ্টকে বাধান। ঠাকুর বাণীর উদ্দেশ্যে এই বৃক্ষের নীচে ভোগ দেওয়া হইয়া থাকে। একদা ঠাকুরবাণী “তেঁতুলের টক" খাইয়া তাহার একটি বীজ রোপন করিয়াছিলেন, তাহাতেই এই বৃক্ষ জনিয়াছিল। বালক কবি প্রশান্তকুমার চাপঘাট নিবাসী একষ্ট্রা এসিষ্টেণ্ট কমিশনার শ্রীযুক্ত দীননাথ দাস বি,এ মহাশয়ের ছেলে প্রশান্তকুমার দাস সবেমাত্র বার বৎসর বয়সে পদার্পণ করিয়া গত ১৩২১ বাং জ্যৈষ্ঠমাসে মাতামহালয় বাণিয়াচঙ্গে জীবনত্যাগ করিয়াছে। অল্পবয়সেই বালকের অসাধারণ প্রতিভা লক্ষিত হইয়াছিল। বিশেষতঃ ইতিমধ্যেই কবিতা রচনায় সিদ্ধহস্ত হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার কোনও কবিতা জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় নাই, কিন্তু কবিতার খাতাখানিতে যে গুলি লিপিবদ্ধ হইয়াছে, তাহা পাঠ করিলে মনে হয় এই কবিকোরক অকালে কালকীট দৃষ্ট না হইলে ইহার যশঃ সৌরভে মাতৃভূমি আমোদিত হইত। বিপিন বিহারী দাস করিমগঞ্জ সবডিভিশনের অন্তর্গত মর্য্যাতকান্দি গ্রামে মাণিক্যরাম দাস নামে এক সদগুণসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, তিনি তেজস্বী ও স্পষ্টবাদী লোক ছিলেন; লাতু নিবাসী মোন্শী গৌরীচরণ, ইহার সহিত আপন দুহিতা সুভদ্রার বিবাহ দেন; এই সুভদ্ৰাই বিপিন বিহারীর গর্ভধারিণী । বিপিনবিহার পিতৃতেজস্বীতা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। বিপিনবিহারীর পিতার অবস্থা ভাল ছিল না বলিয়া পুত্রের শিক্ষার জন্য তিনি ব্যয় দিতে পারেন নাই, এদিকে বিপিনের বিদ্যাশিক্ষার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া তিনি কলিকাতায় যাইতে ইচ্ছুক হইলেন, কিন্তু কলিকাতায় থাকার ব্যয় সঙ্কুলানের কোন উপায়ই হইল না, তখন তিনি অর্থোপাৰ্জ্জনের জন্য আসামে গমন করেন ও তাহাতে কোনরূপ পাঠের ব্যয়মাত্র সঙ্কুলান পূৰ্ব্বক এফ, এ এবং বি,এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বি,এ পরীক্ষা দিয়া গৌহাটীতে নৰ্ম্মাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন ও এম, এ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতে থাকেন। দুই বৎসর পরে কঠিন রসায়ন শাস্ত্রে পরীক্ষা দিয়া প্রথম স্থান অধিকার করেন। গৌহাটী নৰ্ম্মাল স্কুলের শিক্ষক থাকাকালে তিনি বাঙ্গালা ভাষায় "রসায়ণের উপক্রমণিকা" নামে এক সচিত্র গ্রন্থ প্রণয়ন পূৰ্ব্বক ১২৮৪ বাংলার শ্রাবণ মাসে উহা প্রকাশ করেন। ঐ গ্রন্থের পরিশিষ্টে তৎসঙ্কলিত বহু পারিভাষিক শব্দ সংযোজিত হইয়াছে। তৎপূৰ্ব্বে রসায়ণশাস্ত্রের তাদৃশ