পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১১১ রঘুনাথ ভট্টাচাৰ্য্য শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ৩য় ভাগে ইটার প্রসিদ্ধ বিদ্যাবিনোদের কথা বলা গিয়াছে, সেই বং রঘুনাথের জন্ম হয়। ছয় বৎসরের সময় রঘুনাথ পিতৃমাতৃহীন হইয়া পড়েন। অষ্টমবর্ষে উপনয়ন হয়, তদনন্তর তাহার অধ্যয়ন আরম্ভ। কিছুদিন মধ্যেই তিনি ব্যাকরণে ব্যুৎপত্তি লাভপূৰ্ব্বক অলঙ্কার ও তর্কশাস্ত্রে সুপণ্ডিত হইয়া উঠেন।১২১ বাল্যবধিই তিনি হরিভক্ত; একদিন কথাপ্রসঙ্গে অধ্যাপক বলিলেন যে কুলধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া তাহার বৈষ্ণবমত পোষণ করা অনুচিত। এতদুত্তরে রঘুনাথ যাহা বলেন, অধ্যাপকের তাহা মনোমত না হওয়ায় উভয়ে এতদ্বিষয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়, ফলে তদবধিই তাহার অধ্যয়নের শেষ হয়। আত্মীয়বর্গ এই বৃত্তান্ত অবগত হইয়া তাহাদের কৌলিক গুরুবংশীয় এক ব্যক্তিকে আনাইলেন, সেই বৃদ্ধ কুলগুরু বীরাচারী হইলেও সিদ্ধ মন্ত্রের উপাসক ছিলেন, তিনি রঘুনাথকে অনেক বুঝাইলেন, কিছুতেই যখন রঘুনাথকে প্রবোধ দিতে পারিলেন না, তখন বলিলেন—“বাছা, আমি কৌলিক সিদ্ধমন্ত্রটি তোমাকে দিতেছি, ইহা জপ করিলেই তুমি শক্তিমন্ত্রের মহিমা বুঝিতে পারিবে, তারপর যাহা মনে হয় করিও।” রঘুনাথ বৃদ্ধ হইতে প্রাপ্ত মন্ত্র জপ করিতে লাগিলেন, জপিতে জপিতে তাহার হৃদয় ক্ষেত্রে শ্যামমূৰ্ত্তির অত্যুজ্জ্বলরুপ ফুটিয়া উঠিল, পরম উৎসাহে তিনি আরও জপ করিতে গিয়া দেখিতে পাইলেন যে, সেই মধুরমূৰ্ত্তি জগদ্ব্যাপিনী; অন্তরে বাহিরে সৰ্ব্বত্র সেই বরাভয়দাত্রী মূৰ্ত্তি বিরাজিতা ॥১২২ মন্ত্রশক্তির অব্যর্থতা প্রত্যক্ষীভূত হইলেও উদ্বেগ গেলনা, শক্তিমন্ত্রে বিশ্বাস জাত হইলেও, হৃদয়ের বদ্ধমূল ভাব মন হইতে একবারে দূর হইল না। বয়স ২৫ বৎসর মাত্র, তখন চিন্তাকুলিত চিত্তে অনেক খানা পুঁথিপত্র লইয়া তিনি ভ্রমণে বহির্গত হইলেন। মনুমুখের নিকটবৰ্ত্তী ঢেউপামা নামক স্থানে “খেয়া” পার হইবার কালে দেখিলেন এক পরমলাবণ্যবতী বিধবা বালা জল লইতে আসিতেছে। রূপজ মোহ বড় ভয়ঙ্কর, ইহাতে বিদ্বান ব্যক্তিও আকৰ্ষিত হন, সাধকের বহুদিনের পরিশ্রম পণ্ড হইয়া পড়ে। যুবক রঘুনাথের চিত্ত রূপের ফাঁদে ঠেকিল, তাহার চিত্তফলকে সে রূপের ছায়া পতিত হইল, তিনি বাধা পড়িলেন। আর তাহার ভ্রমণে যাওয়া হইল না, ফিরিয়া দাড়াইলেন যুবতীর সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রচালিত তাবৎ তদীয় পিতৃগৃহে উপস্থিত হইলেন। তখন সন্ধ্যা আগতপ্রায়, এ সময় গৃহী অতিথি ফিরায় না, রঘুনাথ সেই গৃহে রাত্রিবাসের অনুমতি পাইলেন। পিতৃগৃহে সেই বিধবা কন্যাই অতিথি পরিচর্য্যার ভার পাইল । রূপবিমুগ্ধ রঘুনাথের হিতাহিত জ্ঞান অনেকটা লোপ পাইয়াছিল, তাই অবসর বুঝিয়া পরিচর্য্যানিরতা সেই বিধবাকে মনোভাব বলিতে লজ্জা অনুভব করেন নাই। রঘুনাথের ভাব দেখিয়া ও তাহার কথা শুনিয়া যুবতী একটু হাসিল ও বলিল—“ঠাকুর বড়শী দিয়া মাছমারা দেখিয়াছেন তো, বড়ই উৎসাহে মাছ টোপ গিলিতে গিয়া প্রাণ দেয়। আপনি জ্ঞানী হইয়া পাপ ১২১. “যে যে অধ্যাপক আছে করেন পঠন। অল্পদিনে সৰ্ব্ববিদ্যা করিলা শিক্ষক৷”—রঘুনাথ লীলামৃত (মুদ্রিত) ১২২. “পঞ্চ মকারেতে দেবীর করিলা পূজন। সিদ্ধমন্ত্রগুণে দেবী দিলা দরশন।"