পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ বঙ্গবাসী,—১৬ই ভাদ্র ১৩১৮ সাল “বাঙ্গালার খাটি ইতিহাস লিখিবার সুযোগ ক্রমেই অগ্রসর হইতেছে। অধুনা ইংরেজী শিক্ষিতদের মধ্যে অনেকেরই একটা এমন ধাচা দাড়াইয়া গিয়াছে যে, তাহারা ছোট কাজ আরম্ভ করিতে চাহেন না। যে বৃহৎ কল্পনা তাহাদের চক্ষু ঝলসিয়া না দেয় তাহাতে তাহাদের বড় আস্থা থাকে না। তাহারা বড় কল্পনা লইয়া বড় কাজ করিতে চাহেন। অথচ বড় কাজের আরম্ভেই হয়ত তাহাদের আয়ুঃশেষ হইয়া যায়, তথাপি তাহারা ছোট কাজে হাত দিতে চাহেন না। ছোট কাজ আরম্ভ হইলে, ক্রমে ব্যষ্টিতে সমষ্টির কাজ হওয়াই অসম্ভব। বাঙ্গালার ক্ষুদ্র পল্লীগ্রামের কোন খবর রাখেন না, অথচ সমগ্র ভারতের উদ্ধার করিতে চাহেন, এমন দুৰ্ব্বদ্ধি পুরুষের অভাব আমাদের দেশে নাই বলা বাহুল্য, তাহাদের ইতোনষ্টোততোভষ্টঃ । পল্লীগ্রামেরও দুঃখ ঘুচেনা, ভারতেরও উদ্ধার হয় না। সকল কাজের সম্বন্ধেই ত এই কথা। ইতিহাস বা ইতিবৃত্ত লিখিবার কথাটাই ধর না। আমরা একটী পল্লীগ্রামের কোন খবর রাখি না, জেলার কথা ত দূরের কথা, আমরা সমগ্র বাঙ্গালার ইতিহাস লিখিতে বসি । এমন কি, অনেকে দুৰ্ব্বদ্ধির বশে সমগ্র ভারতের ইতিহাস লিখিয়া থাকেন এবং লিখিতে চাহেন। যাহারা এরূপ লিখেন, তাহারা আবার গডডলিকা-প্রবাহে ভাসিয়া যান। তাহারা দেশের নূতন পুরাতন কোন তথ্য সংগ্রহে কিঞ্চিম্মাত্র ক্লেশের ব্যয় করেন না; কিন্তু পাশ্চাত্য ইতিহাস লেখকেরা যা লিখিয়াছেন বা বলিয়াছেন, তাহারই পুনরুদ্ধার করেন মাত্র। তাহাদের ইতিহাস লিখিবার অধ্যবসায় বা মেধা নাই, অথচ ইতিহাস লেখকের গৰ্ব্বপরিচয়প্রার্থী । সৌভাগ্যের বিষয়, এখন এভাবের কতকটা পরিবর্তন হইয়াছে। যেরূপ ব্যষ্টিভাবে ইতিহাসের আলোচনা করিলে, সমষ্টিতে দেশের পূর্ণাঙ্গ পুষ্টিময় ইতিহাসের সৃষ্টি হইতে পারে, এখন অনেকেরই সেই ভাব জাগিয়া উঠিয়াছে। এখন অনেকেই ইতিহাস লেখার প্রকৃত পথানুসরণ করিতেছেন। এখন কেহ কেহ সমগ্র বাঙ্গালার ইতিহাস লিখিবার প্রয়াস না করিয়া বাঙ্গালার খণ্ডাংশ জেলার ইতিহাস লিখিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। যেরূপ ভাবে তথ্যানুসন্ধান করিলে, যেরূপ ভাবে শ্রমসাধনায় মনোনিবিষ্ট হইলে, যেরূপ ভাবে অর্থব্যয়ে দৃষ্টি রাখিলে, একটা জেলার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হয়, এখন কেহ কেহ সেই ভাবে ইতিহাস লিখিতেছেন। 米 米 :}; 略、 :k আজ কাল ইউরোপীয় ইতিহাসে নূতন ভাবের বিকাশ দেখা যায়। প্রাচীন ইতিহাস লেখকেরা কেবল তথ্য লইয়া থাকিতেন, পরন্তু কেবল ভাষার সৌন্দৰ্য সাধনে দৃষ্টি রাখিতেন। এখনকার ইতিহাস লেখকেরা তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতিত্ব বিশ্লেষণে মনোযোগী হইয়া থাকেন। আমাদের এদেশে এখন কেহ কেহ আধুনিক পাশ্চাত ইতিহাস রচনার প্রণালী মতে চলিতেছেন। অন্ততঃ যাহারা বাঙ্গালার খণ্ডাংশের ইতিহাস লিখিতেছেন, তাহাদের রচনায় ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইংরেজী লেখকেরা বলেন যে কেবল লিখিত পঠিত বিষয় লইয়া ইতিহাস লিখিলে চলিবে না, চির প্রচলিত কিম্বদন্তী, প্রবাদ প্রভৃতির সন্ধান লইতে হইবে, তবে কোনটি বিশ্বাসযোগ্য আর কোনটি বিশ্বাসযোগ্য নহে, তাহার বিচার করা চাই । সে ক্ষমতা আমাদের ঋষি ইতিহাস লেখকদের ছিল। ফলে ইংরেজ লেখকের কথাট অমান্য নহে ।