পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় ; উপেন্দ্র বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৬৯ চিংথোং খোম্বা শ্রীমন্দিরে ব্যবহারার্থ শিরোমণির সহিত ৫ মণ ওজনে একটা বৃহৎ কাংস্য ঘণ্টা দিয়াছিলেন; শ্রীবিগ্রহের ভোগ ও সন্ধা আরতি কালে উহা নিনাদিত হইত। প্রায় ৮০/৯০ বৎসর হইল, পাহারাদারের মশাকে অগ্নিতে ঠাকুরবাড়ীর কাচা নাটমন্দির দগ্ধ হয়, তৎসহ ঘণ্টাটিও গলিয়া নষ্ট হইয়া যায় ॥৩১ পরশুরাম পণ্ডিত শিরোমণির পুত্রের নাম পরশুরাম; ইনি পিতার ন্যায় সুপণ্ডিত ছিলেন। সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সময়ে (৮ জলুস ৭ রজব) ১৭৬৮ খৃষ্টাব্দে শ্রীহট্টের নবাব মোহাম্মদ আলী খা বাহাদুর ঢাকাদক্ষিণের আমকোণা মৌজা হইতে ১৫ খানা বাড়ী ও টীলা প্রভৃতিতে,৩০/হাল ভূমি ইহাকে ব্ৰহ্মত্র দান করেন। পরশুরাম দেশের ধনী ব্যক্তিবর্গের বিশেষ অনুরাগভাজন ছিলেন এবং অর্থ সম্পত্তিও প্রচুর উপাৰ্জ্জন করেন; এমন কি তাহার বংশে তিনি “লাখিপরশুরাম" নামে খ্যাত হইয়াছিলেন। কলা বিদ্যায়ও তাহার বিশেষ অনুরাগ ছিল, তাহার নির্মিত মৃৎপ্রতিমা লোকে আগ্রহ করিয়া দেখিতে আসিত। তিনি, মোমম্বারা রাধাকৃষ্ণের সুন্দর যুগলমূৰ্ত্তি প্রস্তুত ক্রমে কাশীতে লইয়া গিয়া কারিগর দ্বারা সেই আদর্শে ধাতুমূৰ্ত্তি গঠিত করিয়া আনয়ন পূৰ্ব্বক প্রচুর ব্যয়ে বিবাহ দিয়াছিলেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর বাড়ীতে রাজা, দেওয়ান প্রভৃতি গমন করিতে আরম্ভ করিলে তাহাদের প্রদত্ত অর্থ যে প্রচুর আয়ের পন্থা স্বরূপ হইয়াছিল, তাহা বলা বাহুল্য। মিশ্রবংশে পূৰ্ব্বাবধি পর্য্যায়ক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মন্দিরের আয়-ভোগের রীতি প্রচলিত থাকায়, যাহার পৰ্য্যায়কালে ইহাদের কাহারও আগমন ঘটিত, তিনিই বিশেষ লাভবান হইতেন। ইহাদের প্রদত্ত অর্থে যাহাতে সকলে বঞ্চিত না হন, তজ্জন্য অতঃপর মিশ্রবংশীয়গণ মধ্যে এক দলিল সম্পাদিত হয়, তাহাতে জানা যায় যে, শ্রীহট্টের কোন কোন নবাবও দেবদর্শনে আগমন করিতেন।৩২ উক্ত দলিলে পরশুরাম প্রভূতি যাহাদের নাম আছে, তাহারা সকলেই পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন এবং পরস্পরে ভ্রাতৃ-সম্পর্কিত ছিলেন। কমলাকান্ত জনাবদার ইহাদের জ্ঞাতি সম্পর্কিত ভ্রাতুষ্পপুত্র মাধব তর্ক চূড়ামণি ও কমলাকান্ত । কমলাকান্ত একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন, নবাব সহকারে তাহার “জনাবদার” উপাধি ছিল। নিজ গুণ-গৌরবে তিনি নবাব নোয়াজিস মোহাম্মদ খাঁর নায়েব আচল সিং হইল ৬ জলুস ১ শরফ তারিখযুক্ত এক সনদে (নং ৮১০ খৃঃ); পং বরায়া হইতে = ভূমি দান প্রাপ্ত হন (১৭৫৯ খৃঃ); আর এক সনদে ৩১. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ১ম ভাগ ৮ম অধ্যায়ে চিং থোং খোম্বার সময়ে মণিপুরের প্রচারের কথা বর্ণিত হইয়াছে। চিং থোং খোম্বার বিচিত্র কাহিনী ১৩১৯ বাংলা জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা সাহিত সংবাদ । পত্রে “ঐতিহাসিক চিত্র” প্রবন্ধে আমরা প্রকাশ করিয়াছি। তাহাতে প্রাসঙ্গিক শিরোমণির মণিপুর গমন কথাও বর্ণিত হইয়াছে। ৩২. উক্ত দলিলের অবিকল প্রতিলিপি এই: ইং শ্রীসিবরাম পণ্ডিত গং ও শ্রীপরূশ রাম পণ্ডিত ও শ্রীকেশব রাম পণ্ডিত গং ও শ্রীধাতুরাম পণ্ডিত অস্য সময় করায় পত্র মিদং কাৰ্জ্জঞ্চ আগে আমরা সকলে জমাবদ্ধ (একত্র) ইহআ সময় করিলাম, ঠাকুর সেবায় আমরায় যে বারি (পালা। আছিল তাতে নবাব ও বৈষ্ণব (প্রভৃতি) ও দুর্লভ দাসের নিজ ঘর ও তান সঙ্গে জে আইসেন-সকলর ববান (এজমালি)। আর দুৰ্ল্লভ দাসর ইথানর (অর্থাৎ ঐ স্থানের) মুহন মালা ও লগুণ (সোনার মোহন মালা ও স্বর্ণ উপবীত) গৈয়র ও খতে যে পাইছি এর (ইহা) বাৰ্টীয়া (বিভাগ করিয়া)। লৈমু এতে বেৰ্ত্ত কোন অজাউত তাফাউত (?) করি স্বগীয় গুনাগার এতধত্তে সময়কার পত্র লিখিয়া দিলাম। ইতি ১১৬৬ সাল বাং তারিখ ১১ আষাঢ় ।