পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৭ প্রথম অধ্যায় : পঞ্চখণ্ডের ব্রাহ্মণগণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত উপহার গ্রহণ করিয়াছিলেন।” ইনি যে তদীয় আচর্চনায় বস্তু, তাহার ব্যবহারে তাহা জানা গিয়াছিল। মধুসূদনের কনিষ্ট পৌত্র রামকৃষ্ণ, তৎপুত্র কমলাকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য হেড়ম্বেশ্বর হইতে কতক ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন, তিনি এদেশ প্রচলিত নৌকাপূজা বিশেষ আড়ম্বরে সম্পন্ন করেন এবং এক মৃন্ময়ী রক্ষাকালী মূৰ্ত্তি স্থাপন করিয়া যশস্বী হন। ইহার জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রসিদ্ধ গোপীনাথ শিরোমণি তৰ্কশাস্ত্রে ও তন্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি সৰ্ব্বদা যোগশাস্ত্র আলোচনা করিতেন ও যোগ্যানুষ্ঠান নিরত ছিলেন। তিনি প্রণায়াম পূৰ্ব্বক জলের উপর ভাসমান থাকিতেন, জলের উপর দিয়া হটিতে পারিতেন এবং “নেতি ধৌতি যোগে নাড়ী শোধনাদি প্রক্রিয়া করিতেন। হেড়ম্বাধিপতি কৃষ্ণচন্দ্র নারায়ণ তাহার গুণগ্রাম জ্ঞাত হইয়া তাহাকে সভাসদ নিযুক্ত করেন ও বহুতর নিষ্কর ভূমি প্রদান করেন ।** গোপীনাথের ভ্রাতার নাম মহেশ্বর ভট্টাচার্য। তিনি পূৰ্ব্বোক্ত মৃন্ময়ী মূৰ্ত্তির জন্য এক ইষ্টকমন্দির প্রস্তুত করেন এবং গ্রাম দুর্গম পথগুলিকে সুগম শড়কে পরিণত করিয়া সাধারণের হিত সাধন করেন। ইহাব পুত্র অভয়ানাথ ন্যায়পঞ্চানন দেশে একটোল স্থাপন পূৰ্ব্বক বহু বিদ্যার্থীকে বিদ্যাদান করেন। পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত সূৰ্য্যকুমার তর্কসরস্বতী মহাশয় উক্ত গোপীনাথেরই সুযোগ্য পুত্র। মধুসূদন কাহিনী তিনিই আমাদের নিকট প্রেরণে উপকৃত করিয়াছেন। ১৫. মধুসূদন ভট্টাচাৰ্য্য ও ব্যাদিত-বদন মহাপুরুষ কথিত আছে যে, মধুসূদন জগন্নাথ নীলাচলে স্বীয় মাতৃদেবীসহ যাইতে ইচ্ছা করিয়া, তাহাব উদ্যোগ করিতে ছিলেন। এমন সময় এক বিচিত্র স্বপ্ন দর্শন কবেন। দেখেন যে তাহাব ইষ্টদেব দাকব্রহ্ম রূপী জগন্নাথ আবির্ভূত হইয়া বলিতেছেন—“মধুসূদন, ক্ষেত্রে গিযা তোমার প্রয়োজন নাই, তোমার ভক্তিবশে আমি তোমার দ্বাবে আবদ্ধ। তোমার বিশ্বাস হইতেছে না ? “অমুক" দিনে আমি একথার প্রমাণ দিব” স্বপ্নটি ভাঙ্গিয়া গেল। স্বপ্নটি অদ্ভুত হইলেও ইহা এতাদৃশ সুস্পষ্টরূপে দেখিয়াছিলেন যে তিনি হইতে কিছুমাত্র অবিশ্বাস না করিযা, ভগবাদাদেশ বলিযা জ্ঞান করিলেন ও ভক্তি সহকাবে সেই নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা কবিতে লাগিলেন, তীর্থযাত্রা আপাততঃ স্থগিত হইল। ক্রমে সেই দিন সমাগত হইল, মধুসূদন সাধ্যমত উওমভোজ্য দ্রব্য, সুগন্ধ কুসুমহার প্রভৃতি অনুরাগভবে দেবগৃহে নিয়া রক্ষা কবতঃ নিতান্ত সমাপন পূৰ্ব্বক একচিত্তে চিন্তামণির চিন্তা করিতে লাগিলেন। দ্বিপ্রহর অতীত হইয়া গেল, মধুসূদনেব চিত্ত চঞ্চল। হায, তবে কি সে স্বাভিলষিক সুস্বপ্ন সফল হইবে না? ইহা কি চিত্তের আত্মবঞ্চনা মাত্র ঃ না তাহা নহে,সাংসাবিক আবিলতা শূন্য নিৰ্ম্মলান্তঃকবণ ভক্তেব চিত্তে সত্যেব ছাযাই যথাযথ প্রতিফলিত হইযা থাকে। ভক্তেব স্থির চিত্তের সে স্বপ্ন বিফল হইবে কেন? অকস্মাৎ বাকশক্তি-বিহীন এক কুষ্ঠরোগ সন্ন্যাসী দেবালয়ের সম্মুখে আসিযা দাড়াইলেন;সন্ন্যাসী মুখবাদান কবিয়া দাড়াইয়া রহিলেন। মধুসূদন তখন ধান নিমগ্ন। তিনি ইহাকেই জগন্নাথ বলিয়া ধ্যানে অনুভব করিলেন ও ধ্যান ভঙ্গে সংগৃহীত ভোজ্য দ্রব্যাদি ভক্তি ভবে তদীয় ব্যাদিত বদন-গহরে অপণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু সংগৃহীত সমস্ত গলাধরণান্তে সে ব্যাদিত বদন সন্ধুচিত হইল না। নিরূপায় হইযা মধুসূদন তখন দেবগৃহে সহিত জল কলস মুখে ঢালিযা দিলেন। তাহাতে ভোজনেব অভিপ্রায় নিবৃত্ত হইল না, বদন পূৰ্ব্ববৎই ব্যাদিত রহিল। মধুসূদন আর দিবেন? অগত্যা তিনি মাকে ডাকিলেন ও ঘবে যাহা কিছু খাদ্য দ্রব্য আছে, আনিযা দিতে বলিলেন, অমনি সে মূৰ্ত্তি লুকাযিত হইল। মধুসুদন বিষাদিত হইযা ধবাবলুষ্ঠিত হইতে লাগিলেন, এইরূপে দিবা অতীত হইল রাত্রে কিঞ্চিত নিদ্রাকর্ষণ হইলে, স্বপ্নে পূৰ্ব্ববৎ তিনি দেব দর্শন পাইলেন। জগন্নাথ তাহাকে সাস্তুনা দান কবিলেন।” বলিলেন—-তোমার স্বহস্তে আমি আহার কবিয়াছ। তোমাব দুঃখ কি? তোমাব বংশে কেহ ক্ষেত্রধামে না গেলেও আমি সন্তুষ্ট থাকিব, তোমার সন্তোষার্থ প্রতিজ্ঞা কবিলাম।" আজ পর্যন্ত এ বংশীয কেহ শ্ৰীক্ষেত্র যান নাই। ১৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পুৰ্ব্বাংশেব উপসংহাবাধ্যাযে এই ভূদান সনন্দ উদ্ধত হইযাছে।