পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫১ তৃতীয় অধ্যয় বৈদ্য ও কায়স্থাদি বংশ u শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পুরুষরামের গঙ্গাপ্রসাদ ও বৈদ্যনাথ নামে দুই পুত্র ছিল। তন্মধ্যে বৈদ্যনাথ পিতার মৃত্যুকালে মাতৃগর্ভে ছিলেন। পুরুষরামের মধ্যম ভ্রাতা গোবিন্দরামেরও দুই পুত্র কালিকা প্রসাদ ও আদিত্যরাম, এবং কনিষ্ঠ জয়দেবের জগন্নাথ নামে একপুত্র ছিল, ইহাদের কেহ কেহ দশসনা বন্দোবস্তের সময় জীবিত ছিলেন। গঙ্গাপ্রসাদ ও বৈদ্যনাথের নামে পরে তত্রতা ১নং ও ৩নং তালুক এবং কালিকাপ্রসাদেব নামে ২নং তালুকের বন্দোবস্ত হয়। কালিকাপ্রসাদের প্রতিজ্ঞা পালন পুরুষরামের শোকে বৃদ্ধ রামেশ্বর যখন পরিতপ্ত হইতেন, তাহার শিশু পৌত্র কালিকা প্রসাদ কোলে বসিয়া অনুতপ্ত হইত। শিশু পিতামহকে ক্ৰন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করিতে এবং বৃদ্ধের মুখে পুরুষরামের প্রতিজ্ঞার কথা একাগ্রমনে অশ্রঃপূর্ণ লোচনে শ্রবণ করিত। ইহাতে শিশু কালাবধিই নবাব নামের প্রতি র্তাহার ঘৃণার উদয় হয়। তিনি যখন প্রাপ্তবযস্ক, তখন ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আধিপত্য দেশে প্রতিষ্ঠিত হইলেও, শাসনভাব নবাবের হাতে রহিয়াছিল। সংসারের ভার যখন কালিকাপ্রসাদের উপর পড়িল, তখন রীতিমত হাতী দিয়া সেই নবাবের তুষ্টি সাধনে কালিকাপ্রসাদও নবাবের আদেশে ঢাকায নীত হইলেন। পরিবারবর্গ কান্দিয়া অস্থির হইয়া তাহাব কনিষ্ঠ ভ্রাতা আদিত্যরাম প্রভৃতি সঙ্গে চলিলেন;কৰ্ম্মচারী ও হিতৈষী বন্ধুবান্ধবও সঙ্গ ত্যাগ করিল না। ঢাকাতে উপস্থিত হইলে, তাহার প্রতি কঠোব দণ্ডাদেশ হইল, কিন্তু তিনি ভীত হইলেন না, তাহার সঙ্কল্প রহিল—হাতী দিতে স্বীকৃত হইলেন না; তাহাব ঔদ্ধত্যে নবাব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইলেন; আদেশ অমান্য ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন জন্য, তাহার পর তাহাকে রণ মাতঙ্গের পদতলে নিক্ষিপ্ত কবার শেষ আদেশ প্রচারিত হইল। ভীষণকায় রণমাতঙ্গ উপস্থিত হইল, দণ্ডাদিষ্ট কালিকা প্রসাদকে এখনই নিম্পিক্ট করিবে:কালিকাপ্রসাদেব দেহপিঞ্জর ভগ্ন করিয়া ফেলিবে—এখনই প্রাণপাখী দেহপিঞ্জব হইতে পলাইবে। দর্শকগণের সম্মুখে হাতী তাহাকে ধরিল, কিন্তু পদতলে বিক্ষিপ্ত করিল না, শুণ্ড দ্বারা পৃষ্ঠে তুলিয়া রাখিল, কিছুতেই প্রাণবধ করিল না। অমাতোরা নবাবকে বুঝাইয়া দিলেন যে কালিকাপ্রসাদ একজন সাধুব্যক্তি, তাই হাতী তাহাকে হত্যা করে নাই। ইহাকে নিহত করা উচিত নহে । অমাত্যবর্গ এবং মাহুত কালিকাপ্রসাদের প্রসাদ ভক্ষণ করিয়াছিলেন বলিয়াই বোধ হয়। আদিত্যবাম এই উদ্দেশ্য লইয়াই সম্ভবত সঙ্গে আসিয়াছিলেন। যাহাহউক, নবাব বধদণ্ড হইতে তাহাকে অব্যাহতি দিয়া, পুরস্কার গ্রহণের অনুমতি দান করেন। কালিকাপ্রসাদ বলিলেন যে, ঢাকা হইতে তিনি নিজ ভূমির উপর দিয়া বাড়ী যাইবেন, ইহাই তাহার ইচ্ছ। তিনি যে বৃহৎ আশায় এই বর চাহিলেন, তাহা পূর্ণ না হইলেও, ঢাকা হইতে শ্রীহট্ট পর্যন্ত পাদ-পরিমিত সঙ্কীর্ণকায় একটি পথের ভূমি মাত্র তাহার নামে মঞ্জর হইল। ঐ জমির নাম “ঢাকায় লিখার চিরি” বলিয়া খাত হয ।