পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ দ্বিতীয় খণ্ড L শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬২ পড়িযাছিল, তখন রাজস্ব বাকিতে তত্ৰত্য ১নং এবং ৫৩নং তালুকদ্বয় নীলাম হইয়া যায়, কেশবরামের পুত্র হুসালরাম এবং মণিরাম যথাক্রমে দুইটি তালুক ক্রয় করেন (১২০৬ বাংলা); নীলামে বিক্রয় হইয়াছিল বলিয়া তালুকদ্বয় কালেক্টরীর কাগজপত্রে তদবধি “নীলাম তাং” নামে খ্যাত হয়। প্রতাপগড়ের ৯নং এবং ১৬নং তালুকদ্বয়ও এইরূপই রাজস্ব বাকিতে নীলাম হয়, কিন্তু এই তালুকদ্বয়ের জন্য কোন ক্রেতা উপস্থিত না হওয়ায়, উহা গবর্ণমেন্টের খাস (স্বত্ত্ব) গণ্য হয়। শ্রীহট্টের কালেক্টর এই সংবাদ রেভিনিউ বোর্ডে জ্ঞাপন করিলে, ঐ তালুকদ্বয় পূৰ্ব্ব জমাতে যে কোন প্রার্থীকে বন্দোবস্ত দিতে বোর্ড আদেশ দেন; তদনুসারে মণিরাম নিজপুত্র মায়ারাম ও মাণিক্যরামের নামে তাহা বন্দোবস্ত আনেন। তদবধি এই তালুকদ্বয় “খাস তালুক” নামে খ্যাত হয়। ৩৩নং ৩৪নং ও ৫৫নং তালুকত্ৰয় অভাব বশতঃ পূৰ্ব্ব অধিকারিগণ বিক্রয় করেন। ৩৩নং ও ৩৪নং তালুকদ্বয় কানুরাম চৌধুরী ১৭৯৯/১৮০০ খৃষ্টাব্দে ক্রয় করেন এবং পরবর্ষেই “ইস্তিকালি” (নামজারি) করিয়া, কালেক্টরীতে পূৰ্ব্বমালিকের নাম “খারিজ’ করতঃ নিজ নামে “দাখিল” করেন। ৫৫নং তালুকটিও এইরূপই শ্রীহট্টের “বাবু মুরারিচাদ” ক্রয় করতঃ খারিজ দাখিল করেন। কিন্তু ঐ তালুকটি পরে তাহা হইতে চৌধুরীরা ক্রয় করিয়া আনেন। তদবধি এই তালুকাত “খারিজ দাখিল” নামে খ্যাত হয়। পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে, “মৌজাওযারি” কাগজে “সোয়াই নীলাম” ইত্যাদি লিখিত হইয়াছিল। “সোয়াই” (বাদে) শব্দ থাকায় জানা যায় যে সেই কাগজে যে পরিমিত ভূমির উল্লেখ আছে, তাহা “নীলাম ও খাস ও খারিজ দাখিল” সংজ্ঞক উপরোক্ত ৭টি সুবৃহৎ তালুকের অন্তর্গত নহে। এবং “নজর আন্দাজ” অর্থাৎ দৃষ্টির সাহায্যে আনুমানিকরুপে উহার ভূ-পরিমাণ লিখিত হইয়াছে। প্রতাপগড়ে এতদবশিষ্ট যে দশসনা ভূমি ছিল, ইহার পরে হালাবাদি জরিপান্তে তৎসমস্ত সম্পত্তিও চৌধুরীদের করায়েত্ত হয়। প্রতাপগড়ের পূবর্ব ভূম্যধিকারিগণ দক্ষিণ দিশ্বৰ্ত্তী কুফি সর্দারদিগকে বাৎসরিক একটা "নজর” দিতেন। এই সময়ে সেই প্রথামতে ইহাদিগকেও কুফি সর্দারদের “নজর’ যুগাইতে হইত। পরে ঘটনাক্রমে এই বাৎসবিক নজর প্রেরণ বন্ধ হয়। কুকিরাজের নজর গ্রহণ একদা চৌধুরীরা তাহদের জনৈক মোহরের দ্বারা নজর প্রেরণ করেন; নজরের দ্রব্যমধ্যে কয়েকটা কুকুর, কয়েক সের শুষ্ক মৎস্য ও চিনি, অৰ্দ্ধমণ পরিমিত লবণ এবং কয়েক সের সাদা তামাকই প্রধান ছিল। দ্বিভাষী সহ মোহরের নজব উপস্থিত করিলে, রাজা ও রাণী “পুঞ্জির” (পাড়ার) লোকদিগকে “মৃণা” বাদে আহান রিয়া, উভয়ে একাসনে উপবেশন পূৰ্ব্বক উপহার গ্রহণ করিলেন। রাজ ও রাণী লবণ মাত্র রাখিয়া অপর দ্রব্য বিলাইয়া দিলেন। কুকিগণ উৎকট উল্লম্ফন নৃত্যে চিনি মুখে লইয়া ফুৎকার সহকারে তারা একে অন্যের উপর ফেলিতে লাগিল! চিনির এই সদ্ব্যবহার দুষ্টে মোহবেরটি বিস্মিত না হইলেও, তাহাদের উন্মত্ত উল্লম্ফন হুঙ্কারে আতঙ্কিত হইয়াছিল। ১৬, ৯নং তালুকটি শ্রীহট্টের স্বনামধন্য “বাবু মুবাবি চাদ" বন্দোবস্ত গ্রহণ কবিযাছিলেন, তাহাব নিকট হইতেই মৈনার চৌধুরীবর্গ পরে আনয়ন করেন।